জিয়াউল হক ইমন »
‘আমার ছেলেকে যারা যারা মেরেছে, আমি এর সঠিক বিচার চাই। আমি আর কিছুই চাই না। আমার শুধুমাত্র একটা ছেলে। আমি এক বেলা খেলেও দশ বেলা উপোষ থেকেছি ছেলে নিয়ে। আমার টাকা-পয়সাও লাগবে না। শুধু আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’— বুক চাপড়ে আহাজারি করে এভাবেই নিজের ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছিলেন নিহত সন্তানের মা আছিয়া বেগম।
আছিয়া বেগমের বাড়ি আনোয়ারার উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়নে। স্বামী প্রবাসী মৌলভী ইবাহ্রিম ১৮ বছর আগে চলে যান না ফেরার দেশে। এরপর দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে প্রথম ছেলে মৌলভী ইয়াছিন ১০ বছর আগে প্রাণ হারান দুর্বৃত্তদের হাতে।
স্বামী ও এক ছেলেকে হারিয়ে সংসার চালাতে যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন আছিয়া বেগম, ঠিক তখনই ঢাল হয়ে সংসারের হাল ধরেন তার ২২ বছর বয়সী কনিষ্ঠ ছেলে ইমরান। গাড়ি চালিয়েই ইমরান সংসারের অভাব অনটন মেটানোর দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই ইমরানও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
ছেলের মৃত্যু নিয়ে আছিয়া বেগমের অভিযোগ— ইমরানকে ঘটনার দিন তাঁর বন্ধুরা সুকৌশলে খুন করছে। তাই বেঁচে থাকা একমাত্র কন্যা সন্তান জাহিরা বেগমকে সাথে নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ছেলে হত্যার বিচার চাইছেন তিনি।
এর আগে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরের বাকলিয়া থানার বাকলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে খাল পাড় এলাকায় ইমরানের মৃত্যু হয়। শুরু থেকেই ইমরানের মায়ের দাবি— নাজিম, জাহাঙ্গীর এবং খোকন- এই তিন বন্ধু ডেকে নিয়ে তার ছেলে ইমরানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
নিহত ইমরানের মা আছিয়া বেগম এ হত্যাকাণ্ডে ছেলের বন্ধুদের দায়ী করে বলেন, ‘ছেলেগুলো শুধু আমার ছেলের লাশ আমাকে দিয়ে গেল। ওর শরীরে শার্ট-গেঞ্জি কিছুই ছিল না, শুধুই ছিল রক্ত। আমার ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে ডেকে নিয়েছে তারাই ওকে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলের মরদেহ আমাকে দিয়েই তারা পালিয়েছে। আমার মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার ভাইয়ের জন্যে কাঁদছিল।’
তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমরা থানায় যাওয়ার পর এসআই ইমরান আমাকে বলে আপনার ছেলে প্রতিবন্ধী বললে লাশ কাটবে না। আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে বলবেন। থানার ওসি আমাকে একটা কাগজে ৪টা সাক্ষর দিতে বলে। আর তিনিও বলে আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে বলবেন। রাতভর আমাকে থানায় বসিয়ে রেখেছে। সকালে আমাকে জজ সাহেবের কাছ থেকে একটা সাক্ষর আনতে পাঠিয়েছে। আমি কোর্ট থেকে এসে মেডিকেল গিয়ে দেখি আমার ছেলের হত্যাকারী নাজিম, জাহাঙ্গির আর খোকন সেখানে বসে আছে। যে লাশ কাটে তাকে টাকা দিয়ে তাঁর সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলছিল।’
তিনি বলেন, ‘যারা মেরেছে ওরা আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে কুটুমবাড়িতে ভাত খেয়েছে একসাথে। টাকা নিয়েছে আমার ছেলের কাছ থেকে।’
মামলা করার পর আসামি নাজিম আছিয়া বেগমকে হুমকিও দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আছিয়া বেগম বলেন, ‘নাজিম ৫-৬ জন ছেলে নিয়ে এসে আমাকে বলে— মহিলা এটা কিছু করতে পারবে না। থানাকে আমরা বশ করে ফেলেছি।’
এদিকে ইমরানের মরদেহের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে এসেছে বাংলাধারার প্রতিবেদকের হাতে। রিপোর্টে দেখা যায়, ফুসফুসে আঘাতের কারণেই ইমরানের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হত্যা মামলার বিষয়ে আদালত আদেশ দিবেন বলে জানিয়ে মামলার আইনজীবী ফয়েজ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘এখন মামলার সাথে আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি আদালতে দাখিল করেছি। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ইমরানের মায়ের আশঙ্কারই প্রতিফলন ঘটেছে। ফুসফুসে আঘাতের কারণেই তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। শরীরের বা পাশেও একোটি আঘাত রয়েছে। আগামী আগস্ট মাসে প্রতিবেদনটির শুনানি হবে।’
এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার অফিসার্জ ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুর রহিম বাংলাধারাকে বলেন, ‘ঘটনার সময়ে আমি ছিলাম না। এখানে নতুন জয়েন করেছি। তবে, ব্যাপারটি আমি শুনেছি। ভিকটিমের মা পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা করেছেন। আমাদের কাছ থেকে উনি আইনি সহায়তা চাইলে আমরা সহায়তা প্রদান করব।’













