৭ নভেম্বর ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা শেষের ১৪ ঘণ্টায় ধরা পড়ল ১২ টন ইলিশ

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

সাগরে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় ৬৫ দিন বন্ধের পর আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে মাছ শিকার। দীর্ঘ দুই মাস ৫ দিনের অলস সময় কাটিয়ে মাছ ধরতে নেমেছে লক্ষাধিক জেলে। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে গত ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। ৬৫ দিন কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর সড়কের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছিল সুনসান, নীরব। ছিল না জেলেদের আনাগোনা কিংবা মাছ ব্যবসায়ীদের হাকডাক।

তবে, রবিবার সকাল হতেই দৃশ্যপট প্লাটাতে শুরু করে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে লোকজন। সময় বাড়ার সাথে সাথে মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেদের পদচারনায় মুখরিত হতে ফিশারিঘাট প্রাঙ্গন। দৌড়ঝাপ বাড়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের। নিষেধজ্ঞা উঠার ১৪ ঘন্টার মাথায় ঘাটে আসে মাছ ভর্তি ট্রলার। প্রথমদিনে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১১টন ৭০০ কেজি ইলিশসহ সাড়ে ১৬ টন মাছ বিক্রয় হয়েছে।

জেলে সূত্র জানায়, দীর্ঘ ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। একারণে খেয়ে না খেয়ে তাদেরকে জীবনাযাপন করতে হয়েছে। তাই অনেকেই নিষেধাজ্ঞার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই চোরাপথে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূল থেকে সাগরে মাছ ধরতে চলে যায়। তারাই নিষেধজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রথমদিনেই ইলিশ, লাল পোয়া, মাইট্যাসহ নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরেছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গেছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

নুনিয়ারছড়া বাসিন্দা ও একটি ট্রলারের জেলে শফিউল আলম বলেন, দীর্ঘদিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। তাই মাছের জন্য বেশিদূর যেতে হচ্ছে না। বঙ্গোপসাগরের ৪০-৬০ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে জাল ফেললেই ইলিশ ধরা পড়ছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছে ভরে উঠবে হাটবাজার।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেও কক্সবাজার উপকূলে ইলিশের খুব একটা দেখা পাননি জেলেরা। তবে এবার বড় ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলায় ছোট-বড় মাছ ধরা ট্রলার আছে প্রায় ছয় হাজার। এসব ট্রলারে জেলে-শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নিবন্ধিত জেলে পরিবারগুলো ৫৬ কেজি করে চাল পেলেও অনিবন্ধিত জেলে পরিবারে কিছুই জুটেনি।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মাথায় অন্তত ৩ হাজার ট্রলার ইলিশসহ অন্যান্য মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরবে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ইলিশসহ বিপুল সামুদ্রিক মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হবে।

কক্সবাজার মদস্য অবতরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার আহসানুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথমদিনে অনেক মাছ ধরার ট্রলার অবতরণ কেন্দ্রে এসেছে। রবিরার ফিশারিঘাটে সাড়ে ১৬ টন মাছ বিক্রি হয় । এরমধ্যে ১১ টন ৭০০ কেজি ইলিশ। প্রতিটি ইলিশ ৬০০/৭০০ গ্রাম ওজনের।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, নিষেধজ্ঞা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বিভিন্নঘাটে মৎস্য অফিসের লোকজন দায়িত্ব পালন করেছে। যাতে কোন ঘাট থেকে জেলেরা সাগরে যেতে না পারে।

প্রথমদিনে এতো মাছ কিভাবে আসলো তার ব্যাখা হিসেবে তিনি বলেন, ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেদের মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যাওয়ার দরকার হচ্ছে না। এছাড়া প্রতিদিন কিছু মাছ ব্যবসায়ী মাছ ক্রয়ের জন্য ট্রলার নিয়ে সাগরে যায়। এমন কিছু ট্রলার রবিবারও সাগরে যায় মাছ কিনতে। তারাই বিভিন্ন ট্রলার থেকে মাছ কিনে ফিরেছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ