সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
জমে উঠেছে কক্সবাজারের বৃক্ষমেলা। দেশি-বিদেশি প্রায় শতাধিক প্রজাতির ফলদ, বনজ ও শোভাবর্ধন গাছের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। গত চার দিনে প্রায় ৮ লাখ টাকার চারাগাছ বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেছেন নার্সারি মালিকরা। ২৪ জুলাই কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে শুরু হওয়া মেলা সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে। বৃক্ষমেলা চলবে ২ আগস্ট পর্যন্ত, এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের দুই বছর পর কক্সবাজারে আবারো বসেছে বৃক্ষমেলা। আম, কাঁঠাল, লিচু, ত্বিন, খেজুরসহ হরেক রকমের নানা দেশি-বিদেশি ফলের চারা গাছে ছেয়ে আছে মেলা প্রাঙ্গন।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, গ্রাম ও শহরের বাসা-বাড়িতে অল্প জায়গায় দ্রুত ফল পাওয়া যায় বলে বিদেশি জাতের ফল গাছের কদর দিন দিন বাড়ছে। এবারের মেলায় ৩০টি স্টলে শতাধিক প্রজাতির ফল, ফুল, শোভাবর্ধন গাছ পাওয়া যাচ্ছে। তবে, বেশি বিক্রি হচ্ছে ছাদ বাগান উপযোগী গাছ।
‘বৃক্ষপ্রাণে প্রকৃতি পরিবেশ-আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে শুরু হওয়া বৃক্ষ মেলায় মেরিন এগ্রো প্রজেক্ট এন্ড নার্সারী, গ্রীণ স্পেস নার্সারী, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক নার্সারী, ইউএস এআইডি’র ইকো লাইফ কার্যক্রম নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ, রোজ গার্ডেন, মেসার্স সুন্দরবন নার্সারি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার নার্সারী। মেসার্স খালেক নার্সারী, বনফুল নার্সারী, রেখা নার্সারী, এমরান নার্সারী, সবুজবন নার্সারী, জসিম নার্সারী, আল মুফিদ নার্সারি ও সাকিব নার্সারী এবারে অংশ নিয়েছে। সবার কালেকশনে ভরপুর মেলা প্রাঙ্গন।

মেলায় আসা পৌরসভার বাহারছরা এলাকার বাসিন্দা তানিন রায়হান (২৯) বলেন, আমাদের ভবনে ২০টা পরিবারের অবস্থান। বেলকনি ও ছাদে সবাই কমবেশি বাগান করি। সবজি, মরিচ ও নানা ফলদ গাছ লাগানো হয়েছে। কিছু গাছ পরিচর্যার পরও ফল আসে না। তাই মেলায় এসেছি কম পরিচর্যায় তাড়াতাড়ি ফল আসে এমন চারাগাছ নিতে। আম, পেয়ারা, লেবুসহ বেশ কয়েক ধরণের ফুলের গাছও নিয়েছি।
মেলায় আগত বৌদ্ধ মন্দির এলাকার আফরোজা জামান বলেন, মেলা শুরুর পর হতে প্রতিবেশী ভাবীদের মাঝে প্রতিযোগিতা চলছে। কে কত ধরণের ছাদ ও বেলকনি বাগান করে দ্রুত ফলন ফলাতে পারে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুক গ্রুপও খোলা হয়েছে। গ্রুপে যুক্ত হওয়া পরিচিত ভাবীরা কে কি গাছ লাগাচ্ছেন সেটা ফটো আপলোড করছেন।

বাচ্চার পড়াশোনা, ঘর, অনলাইন বিজনেস ও সবকিছু সামলিয়ে বিকেলে দলবেঁধে সমমনা প্রতিবেশী নারীরা মেলায় গিয়ে এটা-ওটার চারা কিনছেন বলে দাবি করেছেন তারাবনিয়ার ছরার বাসিন্দা আমেনা হাবিব। অনেকের প্রতিযোগিতায় পুরুষও যোগ দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মেলায় অংশ নেয়া রোজ গার্ডেন নার্সারী মালিক মফিজুর রহমান বলেন, মেলায় আমি তিনটা স্টল দিয়ে পশরা সাজিয়েছি। ফুলের চেয়ে ফলদ গাছের প্রতি কৃষি প্রেমীদের আকর্ষণ। ছাদ বাগান বা বাড়ির বাইরে অল্প জায়গায় লাগিয়ে যেসব ফলদ গাছ থেকে দ্রুত ফলন পাওয়া যাবে এমন সব গাছ কিনছেন মেলায় আগতরা। গত চার দিনে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো চারা বিক্রি হয়েছে। শেষ অবদি আরো বেশ ভালো বিক্রির আশা করছি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলম বলেন, নিজেদের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে গাছ লাগানো দরকার। সাথে দরকার গাছের পরিচর্যাও। কারণ গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়- কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশ পরিশুদ্ধ রাখো। আজকের চারাগাছ আগামী দিনের সম্পদ। একটি গাছ কাটলে পাঁচটি গাছ লাগানোর মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
কক্সবাজার শহীদ দৌলত (পাবলিক লাইব্রেরি) ময়দানে ১০ দিনব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলায় আগতদের বিনোদনে বিভিন্ন শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। গাছ লাগাতে সচেতনতা বাড়াতে বৃক্ষ মেলার পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে আরো প্রচারণা দরকার বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র কক্সবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের ও কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রাসেল চৌধুরী।













