সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সমন্বয় সুন্দরবন। এসব সম্পদ আহরণ করতে যাওয়া লোকজনকে অপহরণ, লুণ্ঠন করতে গিয়ে ধীরে ধীরে এখানে অপরাধী বাহিনী গড়ে উঠে। এক সময় সুন্দরবন আতংকের নাম হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ জেলে বা পর্যটক যাওয়া অসাধ্য হয়ে যায়। এটি সুন্দরবনের ৪শ’ বছরের পুরনো সমস্যা। প্রাচীন এ সমস্যা সমাধানে এখানকার জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে রক্তের শেষবিন্দু বাজি রেখে কর্মততপরতা চালায় এলিট ফোর্স র্যাব। মুখোমুখি একাধিক যুদ্ধের পর জলদস্যু বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করিয়ে এখন নিরাপদ জনপদে পরিণত করা হয়েছে সুন্দরবনকে। সেই সাফল্য গাঁথা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা।
সুন্দরবনে র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ওয়াইল্ড লাইফ এ্যাকশেন থ্রিলার মুভি ‘অপারেশন সুন্দরবন’র ট্রেইলার উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. বেনজির আহমেদ এসব কথা বলেছেন।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাত সোয়া ৮টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট উন্মুক্ত মঞ্চে ‘অপারেশন সুন্দরবন’র ট্রেইলর উন্মোচন কালে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি আরো বলেন, একসময় আতংকের নাম ‘সুন্দরবন’ র্যাব শুধু দস্যুমুক্ত করেনি- দস্যুতা থেকে বাহিনীর সদস্যদের আলোর পথের যাত্রী করা হয়েছে। স্বাভাবিক জীবন-যাপনে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তবে, এ কাজ এত মসৃণ ছিল না। আমাদের বাহিনীর দু’ডজনের অধিক জনকে জীবনও দিতে হয়েছে। তাদের রক্তের শেষবিন্দুর উপর ভর করে এ অঞ্চলের মানুষ এখন শান্তিতে মধু ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে বেতন নেয়ার পাশাপাশি দেশ ও দশের নিরাপত্তায় প্রাণ উৎসর্গ করা কর্মীই প্রকৃত হিরু উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, সুন্দরবনসহ দেশের নিরাপত্তা অনেক সহকর্মী চোখের সামনে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। এটা সাময়িক কষ্ট দিলেও তাদের জীবন উৎসর্গ আমাদের আশান্বিত করে। গর্বিতভাবে মাথা উঁচু করে চলার শক্তি যোগায় সেসব পরিবারের সদস্যদের। এমন সব দিনক্ষণকে সবার মাঝে বাঁচিয়ে রাখতেই অপারেশন সুন্দরবন সিনেমার সৃষ্টি। এসময় সিনেমা তৈরী নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন তিনি। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর এ ছবির শুভমুক্তি পাবে ঘোষণা দেন আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সিনেমাটি সম্পন্ন করতে সুন্দরবনে বনবিভাগের আন্তরিক সহযোগিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জানান র্যাবের ডিজি। এছাড়াও তাদের কর্মধারাকে সিনেমায় রূপ দিতে সহযোগিতা দেয়া সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ লিমিটেডের প্রযোজনায় রোমাঞ্চকর এই পূর্ণদৈর্ষ ছবিটি পরিচালনা করেন দীপংকর দীপন। বিশ্ব ঐতিহ্য ও সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনকে জলদস্যু ও বনদস্যুমুক্ত করার প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরি এ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন নায়ক রিয়াজ, সিয়াম আহমেদ, নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, রাইসুল আহমেদ আসাদ,রোশান, দর্শনাসহ অনেকেই।
অনুষ্ঠানে লাইভ পারফর্ম করেন চলচিত্রটির অভিনয় শিল্পীরা। চলচিত্রটি ঈদুল আজহায় মুক্তির ঘোষণা এসেছিলো। কিন্তু ঈদে মুক্তি দেয়া হয়নি।
এক প্রতিক্রিয়ায় সিনেমার অভিনয় শিল্পী নুসরাত ফারিয়া বলেন, এটি অনবদ্য একটি স্বপ্নপূরণ। বাস্তবে ঘটে যাওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনাকে জনসম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। অপারেশন সুন্দরবন দর্শকদের নিরাশ করবে না।
নায়ক সিয়াম বলেন, রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীর কর্মকান্ড তুলে ধরা মানে রাষ্ট্রকে রিপ্রেজেন্ট করা। এনফোর্সমেন্টের নিত্য ঝুঁকির কর্মগুলো ফুটিয়ে তোলাও কষ্টসাধ্য। র্যাবের অজানা কর্মকান্ডগুলো সবার মাঝে তুলে ধরতে গিয়ে তিনমাস র্যাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিজেদের ঝালাই করেছি সব কলাকুশলী। সুন্দরবনের মতো ভয়ানক জায়গায় অবস্থান করতে হয়েছে দীর্ঘদিন। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল অপারেশন সুন্দরবন। দর্শকদের মাঝে এটি রোমাঞ্চকর উত্তেজনার অভিজ্ঞতা দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল, জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, কক্সবাজার র্যাব-১৫’র সিও লে. কর্ণেল খায়রুল ইসলাম সরকারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ এবং বিপুল সংখ্যক পর্যটক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।













