মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামে অনিরাপদ হয়ে উঠছে ফৌজদারহাট-বন্দর টোল রোড। যা এখন যুক্ত হয়েছে আউটার রিং রোডের সঙ্গে। সন্ধ্যার পর থেকে পতেঙ্গা ও কাট্টলী বীচে আগত পর্যটকদেরও আতঙ্কে বাড়ি ফিরতে হয়। পুলিশের একাধিক টিম টহলে থাকলেও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পুলিশকে পাহারা দিয়েই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সন্ধ্যা হলেই অনিরাপদ হয়ে উঠে পুরো সড়ক। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ। সিএমপির ৫ থানার টহল চলে এ টোল রোড, বন্দর ও পতেঙ্গাকে ঘিরে।
জানা যায়, বছর চারেক আগে উত্তর কাট্টলীস্থ টোল রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক ডাকাত নিহতের ঘটনার পর থেকে ৫ থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন অংশে পুলিশের টহল অব্যাহত থাকায় সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী পুলিশকে পাহারা দিচ্ছে। ঘটনার আগে ও পরে পুলিশের উপস্থিতের বিষয়টি মাথায় রেখেই সন্ত্রাসীরা ছিনতাই করে যাচ্ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে থাকা চালক ও যাত্রীদের টার্গেট করলেও বিদেশগামীদের গাড়িও ঠেকাচ্ছে।
সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড থেকে পতেঙ্গা বীচে আসা এক দম্পতিকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা ও একটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে গেছে একটি ছিনতাই চক্র। মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান সালাউদ্দিন দম্পতি। ঘটনাস্থল থেকে কেউ কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই চম্পট।
তবে স্থানীয়রা জানান, সেখানে এখনও তৎপর রাসেল, ফরহাদ, বাচ্চু, হৃদয়, সোহাগ ও সফির সাঙ্গপাঙ্গরা।

আরও অভিযোগ রয়েছে, ফেনী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, কুমিরা, ভাটিয়ারী ও ফৌজদারহাট এলাকার প্রবাসী বা বিদেশগামীরা বিশেষ করে ফৌজদারহাট-বন্দর টোল রোড ব্যবহারে আতঙ্কগ্রস্ত। ৪ বছর আগে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড চালু হওয়ার পর থেকে বন্দর টোল রোড ব্যবহারকারীদের মাত্রা আরও বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ সড়কে আগতরা ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানা নির্ধারণ করতে না পেরে বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্তরাই আইনের সাহায্য নিতে পারছে না।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফৌজদারহাট চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের আওতায়, দক্ষিণ কাট্টলী আকবরশাহ থানার আওতায়, উত্তর কাট্টলী পাহাড়তলী থানা পুলিশের আওতায়, একটি অংশ হালিশহর থানা, ঈশানমিস্ত্রীর হাট প্রকাশ ইয়াছিন্নার হাট এলাকা বন্দর থানা এলাকায় এবং জাহাজ বিল্ডিং টু পতেঙ্গা এলাকা পতেঙ্গা থানার আওতায় পড়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা বিব্রত অবস্থায় পড়ে সর্বস্ব খুঁইয়ে বিমানবন্দর যেতে বাধ্য হন।
পাহাড়তলী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তর কাট্টলীস্থ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পুরাতন টোল রোডের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে নেজামত আলীর পুকুর। এই পুকুরকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইকারীরা ওঁৎ পেতে থাকে। পুকুরের অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে থাকা অপরাধীদের পাকড়াও করতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ।

পাহাড়তলী থানার এক তথ্যে জানা গেছে, এ সড়কে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। যা এখনও স্মরণ করে পুলিশ। তবে এর পর আর বড় ঘটনা ঘটেনি। ছোটখাট ঘটনা ঘটেছে যা ছিনতাই মামলায় রেকর্ড হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এসময় এয়ারপোর্টগামী যাত্রীদের গাড়ি ঠেকিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কায়েস উদ্দিন প্রকাশ অপুকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। পুলিশের সাঁড়াশী অভিযান টের পেয়ে রায়হান প্রকাশ গরু রায়হান, রাসেল, ফরহাদ, বাচ্চু, হৃদয়, মো. সোহাগ, মো. সফি, মো. ইমন, ও মোস্তাকসহ আরও ৫/৬ পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা পালানোর সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে একজন। তাকে দ্রæত চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
এদিকে চক্রের গ্রেফতারকৃত সদস্য কায়েসের তথ্য মতে জানা যায়, মৃত সন্ত্রাসীর নাম ছিল সবুজ প্রকাশ পিচ্চি সবুজ (২৫)। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি বিদেশি সিঙ্গেল শুটার গান, ১টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ১টি দেশীয় তৈরি এল.জি, ১টি বিদেশি পিস্তল সাদৃশ্য খেলনা পিস্তল, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ৩ রাউন্ড ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তলের গুলি এবং ৫ রাউন্ড কার্তুজের খোসা উদ্ধার করেছে।
এ ব্যাপারে পাহাড়তলী থানার ওসি জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত ওই সড়কে টহল দিচ্ছে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। টোল রোড এলাকার উত্তর কাট্টলী অংশই শুধু পাহাড়তলী থানা পুলিশের। আরও ৪টি অংশ বিভিন্ন থানা পুলিশের। সেখানে পুলিশের নজরদারি যেমন রয়েছে তেমনি অপরাধীরাও পুলিশকে পাহারা দিচ্ছে।
বাংলাধারা/এআই













