১১ নভেম্বর ২০২৫

সম্পত্তির লোভেই মা’কে গুলি করে মেরেছিল পটিয়ার ছেলে

বাংলাধারা প্রতিবেদক»

পটিয়ায় ছেলে মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনুর গুলিতে মা জেসমিন আক্তার নিহতের ঘটনার নেপথ্যে ছিল সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ। বাবা শামসুল আলমের মৃত্যুর পর থেকেই তার দুই ছেলে ও মেয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। উশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য মাঈনুর সঙ্গে তার পরিবারের সবার দূরত্ব ছিল। সম্পত্তি নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে প্রায়ই হতো দ্বন্দ। ঘাতক মাঈনুর সন্দেহ ছিল—মা সব সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিতে চাচ্ছেন। আর এজন্যই গুলি করে হত্যা করেন তাকে।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় র‌্যাব-৭ সিপিসি-৩ চান্দগাঁও ক্যাম্পে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।

এর আগে বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫ টায় পটিয়ার কেরানীহাট এলাকা থেকে বাসযোগে রাজধানীতে পালিয়ে যাওয়ার সময় নতুন ব্রীজ এলাকা হতে ঘাতক মাঈনুদ্দিন মো. মাঈনুকে (২৯) গ্রেফতার করে র‍্যাব।

গ্রেফতার মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনু পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের পুত্র। নিহত জেসমিন আক্তার শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী এবং মাঈনুদ্দিনের মা।

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ‘ছেলে মাঈনুদ্দিনের পিস্তলের গুলিতে মা জেসমিনের আক্তার নিহতের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মেয়ে বাদী হয়ে মামলা করলে আসামিকে গ্রেফতারের জন্যে আমরা তৎপরতা বাড়াই।’

তিনি বলেন ‘গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি আসামি মাঈনুদ্দিন কেরানীরহাট হতে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি পরিবহনযোগে রওনা হয়। আমাদের দুর্ধর্ষ একটি আভিযানিক দল নতুন ব্রীজ এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামি মঈনুলের দেখানো মতে সাতকানিয়া থানার রসুলপুর এলাকার একটি গুদামঘর হতে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি সংরক্ষিত অবস্থায় উদ্ধার করি। জিজ্ঞাসাবাদে সে উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি দিয়ে তার মাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শামসুল আলম মাস্টার বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেখে যান। শামসুল আলমের ছোট ছেলে এবং মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। গত ঈদুল ফিতর এর সময় তারা দেশে আসেন। শামসুল আলম এর মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে ও মেয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। শামসুল আলমের বড় ছেলে মাঈনুলের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য পরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব ছিল।’

‘নিহত জেসমিনের অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত তার মেয়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। মাঈনুল অভিযোগ করে আসছিল মা তার দুই ছেলেকে বঞ্চিত করে মেয়েকে সব সম্পত্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক ভাবে একাধিক বার বৈঠকও হয়। সম্পত্তি নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। মাইনুলের সন্দেহ ছিলো মা সব সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিতে চাচ্ছেন। এই সন্দেহের কারণেই গঅত ১৬ আগস্ট ঝগড়ার একপর্যায়ে মাইনুল তার মা জেসমিন আকতারকে গুলি করে হত্যা করে মাঈনুল।’— যোগ করেন তিনি।

গ্রেফতার আসামিকে উদ্ধারকৃত আলামতসহ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

এর আগে, ১৬ আগস্ট দুপুরে জাতীয় পার্টির সদ্যপ্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে তার ছেলে মাইনুল ইসলাম (২৯) পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। পরদিন নিহতের মেয়ে বাদী হয়ে মাঈনুলকে একমাত্র আসামি করে পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বাংলাধারা/আরএইচআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ