১১ নভেম্বর ২০২৫

অবাধে বিক্রি হচ্ছে ক্ষতিকর রং মেশানো পচা মাছ

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী »

বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে ক্ষতিকর রং মেশানো সামুদ্রিক পচা মাছ। মূলত সামুদ্রিক পোপা, লইট্যা ও চিংড়ি মাছসহ নানা জাতের মাছে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে উজ্জল করে তাজা বলে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ঘাট বা ট্রলার থেকে মাছ কিনেই রঙের খেলায় মেতে উঠেন এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতেই মাছ হয়ে যায় লাল আর তাজা। ক্রেতাদের প্রায় পচে যাওয়া মাছও দেখে মনে হচ্ছে টাটকা। আর বাঁশখালীর বিভিন্ন বাজারে রং দিয়ে সামুদ্রিক মাছ তাজা করার এমনই চিত্র প্রায়ই দেখা যায়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের ফুলকা লাল দেখানোর জন্যও ব্যবহার করা হয় এসব ক্ষতিকর রং। আর এসব ক্ষতিকর রং দিলে তাতে মাছ আকর্ষণীয় আর তাজা ও পচন রোধ হয় বলে দাবি রং ব্যবহারকারীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালীর প্রধান মাছ বাজার টাইম বাজার, গুনাগরি মাছ বাজার, চানপুর বাজার, নাপোড়া বাজার, জলদি মাছ বাহার, চাম্বল মাছ বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে রং মেশানো সামু্দ্রিক মাছ। মূলত লইট্যা মাছেই এসব রং বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। এসব মাছ বাজারে ১০ থেকে ১২ জন ব্যবসায়ী রং দেওয়া মাছ বিক্রি করছেন। তবে অনেক ক্রেতা এসব রঙের কারবার বুঝতে পেরে এড়িয়ে যাচ্ছেন রং দেওয়া মাছ। আবার অনেক ক্রেতা না বুঝে ক্রয় করছেন এসব ক্ষতিকর রং মেশানো মাছ।

রং দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা আব্দুল মতলব বলেন, রং দিলে মাছ একটু ভালো ও তাজা দেখায়। এসব উজ্জলতা দেখে ক্রেতারা মাছ বেশি কেনেন। অল্প পরিমাণে রং দেই। এতে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় বলে মনে হয় না।

অপর মাছ বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, সরাসরি ভোট থেকে মাছ মাছ কিনি। এরপর বাজারে এসে রং মিশ্রিত পানির মধ্যে ভিজিয়ে উঠিয়ে ঝুড়িতে রাখি। এতে ক্ষতি হয় কিনা জানি না। যদি ক্ষতি তো তাহলে তো দোকানে এই রং বিক্রি করতো না।

ক্রেতারা জানান, শুধু মাছে নয়, সবজি এবং ফলেও অনেক সময় রং দেওয়া হয়। এছাড়া শুধু রং নয়, রঙিন ও উজ্জ্বল বাতির মাধ্যমেও আকৃষ্ট করা হয় ক্রেতাদের। প্রশাসনের নজরদারি না থাকার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ পায় বলে দাবি তাদের।

এ বিষয়ে বাঁশখালী সহকারী কমিশনার (ভুমি) ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, মাছে রং দেওয়ার বিষয়টি এক ধরনের অপরাধ। কৃত্রিমভাবে মাছের রং পরিবর্তন করা ভোক্তাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। আমরা এসব অপরাধ ও অপকর্ম বন্ধ করতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছি। বেশ কিছু মাছ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা পরবর্তীতে উপজেলার বিভিন্ন মাছের বাজার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর মেডিকেল অফিসার ড. দিদারুল হক সাকিব বলেন, কৃত্রিম রং মেশানো যে কোনো খাবারই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যেকোনো ধরনের রং হচ্ছে কেমিক্যাল।

আর রং মেশানো মাছ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে পাকস্থলি, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। মাছসহ যেসব খাদ্যে রং মিশ্রণের সুযোগ রয়েছে, সেসব পণ্য ক্রয়ে ভোক্তাদের সতর্ক হওয়া উচিত বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ