২৭ অক্টোবর ২০২৫

প্রত্যাবাসন নিয়ে দোলাচল; বাড়ছে রোহিঙ্গা শিশু

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৭ সালের এদিনে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে তারা এদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মধ্যযোগীয় বর্বরতার চিহ্ন দেখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হয় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ে। নতুন ঢল ও পূর্বে কয়েক দফায় আসা রোহিঙ্গা মিলে উখিয়া-টেকনাফে এখন প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস। রোহিঙ্গা আগমণের গত পাঁচ বছরে কয়েকদফা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল প্রত্যাবাসনের। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নানান শর্ত ও অজুহাত, মিয়ানমারের তালবাহানায় শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয়। যতই দিন যাচ্ছে, ক্যাম্পে বাড়ছে রোহিঙ্গা শিশু জন্মের হার। গত পাঁচ বছরে ক্যাম্পে প্রায় লাখো শিশু জন্ম নিয়েছে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ভবিষ্যত দিন দিন গভীর অন্ধকারে নিপতিত হচ্ছে। এদেশ নিজেদের সমস্যার উত্তরণ ঘটিয়ে একদিকে এগিয়ে চলেছে, অন্যদিকে এ আশ্রিত রোহিঙ্গারা সরকার ও জাতির জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া থেকে অতি কৌশলে দূরে রাখায় রোহিঙ্গা নিয়ে বিপাকে রয়েছে এদেশের প্রশাসন। দিন দিন রোহিঙ্গা ইস্যুটি সরকারের জন্য বড় ধরনের বাড়তি বোঝা ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি বারবার উঠছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোন উপায় বের হচ্ছে না। মিয়ানমারকে বাধ্য করানো যাচ্ছে না তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেয়ার। আর মিয়ানমারও এমনভাবে ঘাপটি মেরে আছে যাতে এদের ফিরিয়ে নিতে না হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পুরো কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে রয়েছে।

কারণ, রোহিঙ্গারা তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি ছাড়াও মাদকের ব্যবসা, অপহরণ, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। গত পাঁচবছরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহসহ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিভিন্ন সংস্থার বেসরকারি তথ্যমতে পাঁচ বছরে ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এছাড়াও রোহিঙ্গাদের ঠাই দিতে গিয়ে প্রায় আট হাজার একরের বেশি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। বিপর্যয় ঘটেছে পরিবেশের। এ কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে পাহাড় ধসের ঘটনাও। এতে প্রাণহানিও ঘটছে প্রতিবছর।

অভিযোগ আছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার কথা মুখে বললেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণ করে প্রত্যাবাসন ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য, এমনটি দাবি খোদ রোহিঙ্গাদের।
রোহিঙ্গা নেতা ইলিয়্ছা হোসেন, ইব্রাহিম, নূর মুহাম্মদের মতে, প্রত্যাবাসনের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক রোহিঙ্গা ভুলতে বসেছে তারা ভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবে, সে বিশ্বাস উঠে গেছে। যারা নিজ দেশে চলে যেতে চাচ্ছি তারাও, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে যেতে চাই না। এ কারণে প্রত্যাবাসনটা একটি গ্যাড়াকলে আটকে আছে।

কুতুপালং মধুরছরার রোহিঙ্গা সালামত খানের মতে, ক্যাম্পে খুন ও বিশৃঙ্খলায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মদদ রয়েছে বলে খবর পায়। ইয়াবা ব্যবসার সাথে যুক্ত রোহিঙ্গারা সকলেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করছে। অনেকে এসব কথা জানলেও, ভয়ে মুখ খুলেন না।

রোহিঙ্গাদের দায়িত্বশীল নেতা ও সাধারণ রোহিঙ্গারা পাঁচটি দাবি পূরণ হলে মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যেতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো- যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও পুনঃএকিভূতকরণ, মিয়ানমারের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন বাতিল, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রত্যাবাসনের পর আইডিপি ক্যাম্পের পরিবর্তে নিজস্ব গ্রামে ফিরে যাবার সুযোগ ও বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।

এরপরও রোহিঙ্গাদের কবে দেশে ফেরত পাঠানো হবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সময় কারো জানা নেই। দুই দফা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার দেশে ফেরার চেয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার চিন্তায় মগ্ন অনেক রোহিঙ্গা। অনেকে বাংলাদেশে চলমান ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। নানান অজুহাত দেখিয়ে বারবার প্রত্যাবাসনের পরিবর্তে বাংলাদেশে থাকতে বিশ্বসম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর অনুকম্পার দারস্থ হচ্ছেন অনেক রোহিঙ্গা।

উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিতদের কেউ কেউ ভরসা করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রাখতে সাধ্যমতো চেষ্টা করবে এবং তাদের পাশে থাকবে। বিপুল রোহিঙ্গার মধ্যে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যেতে চান এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা হাতেগোনা। কিন্তু বেশির ভাগ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী হওয়ায় যারা ফিরতে আগ্রহী তারাও সহজে মুখ খুলেন না। বিশেষ করে মুহিবুল্লাহর হত্যার পর খোলামেলা ভাবে এখন আর কেউ প্রত্যাবাসনের কথা বলেন না। যদিও শরণার্থী দিবস ও তাদের দেশে ছাড়ার বছর পূরণের দিনে কিছু প্লেকার্ড ও ব্যানার প্রদর্শন। হয়।

থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রহিম উল্লাহ বলেন, আমার জন্মস্থান মিয়ানমার, বাপ দাদার কবর সেখানে। শরণার্থী জীবন আর ভালো লাগছেনা। নিজ দেশে ফিরতে মন চাইছে। জন্মভূমিতে মরতে চাই। যত দ্রæত ফিরতে পারি ততই আমাদের জন্য এবং রোাহিঙ্গা জনগোষ্টির জন্য কল্যানজনক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কথাগুলো বেশিরভাগ রোহিঙ্গাকে আমরা বুঝাতে পারিনা।

তবে, নিজ দেশের প্রতি বিতৃষ্ণায় থাকা সাধারণ রোহিঙ্গাদের একটি অংশের সাদামাটা চিন্তা-ধারণা থেকেই বাংলাদেশে থাকতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এ অংশটির ধারণা, তারা বাংলাদেশে থাকলে বিনা পারিশ্রমিকে বছরের পর বছর ঘরে বসে খাদ্য, চিকিৎসা থেকে মানবিক সব সাহায্য পাবে। মিয়ানমার ফিরে গেলে অনেকের ভাগ্যে হয়তো তা ঝুটবেনা।
টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খতিজা বেগম বলেন, মিয়ানমারে আমাদের কষ্টে দিন যেত। সেখানে আয় রোজগারের সুযোগ থাকে না। এখানে ঘরে বসে খাবার, চিকিৎসা সবই পাচ্ছি। আমাদের এই আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে কেন আবার মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর কথা উঠছে?

উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের আলী আহমদ বলেন, মিয়ানমার সহজে আমাদের মেনে নেবেনা। আমাদের নাগরিকত্ব ও ভিটেমাটি ফেরত দেবেনা। সেখানে শরণার্থী হয়ে ফেরা হুমকি স্বরূপ। মিয়ানমার সরকারকে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা। ফেরত নিয়ে আবারো হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে এ আশঙ্কা থেকে যায়।

আবার, ক্যাম্পে একটি শক্তিশালী গ্রæপ রয়েছে যারা শুধুই নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের অর্থ-বৈভব বাড়াতে মিয়ানমার ফিরে যাবার চরম বিরোধীতা করছেন। তারা অনেকটা ক্যাম্পের মাফিয়া। তাদের হাতে কোটি কোটি টাকা, সোনা-গয়না, মাদকের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক এবং উগ্রপন্থি গ্রæপের নেতৃত্বদাতা। ক্যাম্পে এ প্রকৃতির রোহিঙ্গার সংখ্যা বছরে বছরে বাড়ছে। মিয়ানমার ফিরে গেলে তাদের মাফিয়াগিরি, মাদক কারবার, সোনা চোরাচালান, অস্ত্রবাজি ও কোটিকোটি টাকা কিছুই থাকবেনা। মিয়ানমারে তাদের সাধারণ রোহিঙ্গার মতো কঠোর বিধিনিষেধের গন্ডিতে চলতে হবে। তাই রোহিঙ্গাদের এ অংশটি প্রত্যাবাসন বা রোহিঙ্গাদের স্বদেশ ফেরতের ঘোর বিরোধী। শুধু তাই নয়, প্রত্যাবাসন ইস্যু সামনে এলে এরা হত্যাকান্ড ঘটান। নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভন্ডুল করতে আগে থেকে নির্দেশনা দেয়। সাধারণ রোহিঙ্গারা তাদের কথা মতো না চললে ভয়ানক পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়। আর রোহিঙ্গাদের কারণে অতিষ্ট স্থানীয়রা।

রোহিঙ্গারা গত চার বছরে ক্যাম্পের বাইরে স্থানীয় শ্রমবাজারে নিজেদের দখল পাকাপোক্ত করেছে। রোহিঙ্গরা বাইরে কাজ করাকে তাদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নেয়ায় স্থানীয় শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম মুজুরি নেয়। এতে কাজদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও স্থানীয় শ্রমিকের পরিবর্তে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের কাজে নেয়। ক্ষেতে চাষ, মাছধরা, রিক্সা চালানো, কাঠ মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রির কাজের বাজার রোহিঙ্গা শ্রমিকরা অনেকটা নিজেদের দখলে রেখেছে। এমনকি টেকনাফের স্থলবন্দরে পন্যখালাসসহ যাবতীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের। এতে স্থানীয় শ্রমিকরা পাত্তাই পাচ্ছে না।

হোয়াইক্যংয়ের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের স্থানীয়রা দৈনিক ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা মুজুরি চান। সেখানে রোহিঙ্গারা তিন’শ থেকে ৫০০ টাকায় কাজ করছে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধু আমার ইউনিয়নেই ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাস। তাদের কারণে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। রোহিঙ্গা তুচ্ছ ঘটনায় দলবেঁধে বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়দের তুলে নিয়ে মাধরধর এবং অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। আবার রোহিঙ্গা ঢলের পর ইয়াবার বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় রোহিঙ্গারাও তাদের যে একটি দেশ আছে তা ভুলতে বসেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত থানায় ১ হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি। তিনি বলেন, খুনোখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানব পাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধে কারনে এসব মামলা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় তথ্যমতে অনন্তপক্ষে ১২০টির বেশি হত্যাকেন্ড ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক এডিআইজি হাসান বারী নুর বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের দাবি পূরণ হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে জানিয়েছে।

সম্মানজনক প্রত্যাবাসন না হলেব ফিরে যাবে না বলে জানাচ্ছে তারা। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে ১৬ এপিবিএন। এখন ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে দাবি তার।

মঙ্গলবার ক্যাম্প পরিনদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দুত মিস নোয়েলিন হেজার। এরআগে ১৬আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ পরিদর্শন প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নিজদেশে ফিরতে ইচ্ছুক সাধারণ রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করা সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে ৮ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারের কাছে; কিন্তু মিয়ানমার এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের কাছাকাছি রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন করেছে। বাকিদের চূড়ান্ত ভেরিফিকেশন করতে কত দিন লাগাবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই আমাদের শেষ লক্ষ্য। যখন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে, তখনই চুড়ান্ত সাফল্য আসবে। এ প্রক্রিয়া চলমান, বিষয়টি পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দেখছে। সব ঠিক করে যখন দিন ধার্য্য করা হবে, তখনই সকল লজিস্টক দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর দায়িত্ব আমার। এরপরও প্রত্যাবসন শুরু না হলেও আপাতত ক্যাম্পে চাপ কমাতে একলাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রথম ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসে। এসময় মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে আসা প্রায় সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও বান্দরবনে আশ্রয় নেয়। ১৯৯২ সালে মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালালে সেবছর আড়াই লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়। ২০১২ সাল ও ২০১৬ সালেও বাংলাদেশে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ লাখের বেশি। ২০১৭ সালের আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে ঢুকেছে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ লাখের অধিক। সেখানে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে। বাকিরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে ক্যাম্পের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভোটার তালিকায় নাম উঠিয়ে নিজেরা বাংলাদেশী নাগরিক পরিচয় দিচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনায় অবিশ্বাসী রোহিঙ্গারা গত পাঁচ বছরে ক্যাম্পেই লাখো শিশুর জন্ম দিয়েছে। এভাবে তাদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ