২৪ অক্টোবর ২০২৫

ইউনিকেয়ারের টেস্টে রক্তের গ্রুপে ভুল, মরতে মরতে বাঁচল নবজাতক

জিয়াউল হক ইমন »

ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা ইমরান হোসেন তার গর্ভবতী স্ত্রীকে ভর্তি করান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর একটি পুত্র সন্তানের বাবা হন তিনি। কিন্তু জন্মের পর দেখা দেয় নবজাতকের রক্তশূণ্যতা। রক্তের গ্রুপ টেস্ট করান নগরের ইউনিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। রিপোর্ট আসে রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ।

সেই মোতাবেক ওই গ্রুপের ডোনারও ম্যানেজ করেন তারা। কিন্তু চমেকে এসে নবজাতককে রক্ত দিতে গেলে ক্রসচেক করার সময় ঘটে বিপত্তি। ম্যানেজ ডোনারের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিল নেই নবজাতকের রক্তের গ্রুপ। আরও দুইবার টেস্ট করলেও ফলাফল ‘বি নেগেটিভই’ আসে। অর্থাৎ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রদত্ত রিপোর্টটি ছিল ভুল।—এমন ঘটনা ঘটেছে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় এলাকায় চমেক হাসপাতালের পূর্ব গেইটের বিপরীতের ইউনিকেয়ার হেলথ সেন্টারে।

জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর ইউনিকেয়ার হেলথ সেন্টারের ল্যাব টেকনোলজিস্ট ফরহাদ হোসেন ও ডা. সুমা দাসের স্বাক্ষরিত রিপোর্টে নবজাতকের রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ উল্লেখ করা হয়।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চমেক হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন ডির্পাটমেন্টের পরীক্ষায় নবজাতকের রক্তের গ্রুপ ও ডোনারের গ্রুপ মিল না থাকায় ক্রস ম্যাচ ইন-কম্পেটেবল সিল দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে চমেক হাসপাতাল ও অন্য একটি বেসরকারী ডায়গনস্টিক সেন্টারে একাধিকবার পরীক্ষা করলে দেখা যায় নবজাতকের রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ।

ওই নবজাতকের দাদা মো. জহুর বাংলাধারাকে বলেন, ‘যখন আমার নাতীর রক্তের প্রয়োজন তখন রাত প্রায় দুইটা। তখন আমার এক কলিগের কাছ থেকে বি পজিটিভ রক্ত নিই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখি নবজাতকের রক্তের সাথে ওই রক্তের মিলই নেই। নবজাতকের রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। অথচ ইউনিকেয়ারের টেস্ট রেজাল্টে উল্লেখ করেছে বি পজিটিভ।’

তিনি বলেন, ‘ইউনিকেয়ারের ভুল রিপোর্টের কারণে আমার নাতীর জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। অন্য ল্যাবে যদি আমরা টেস্ট না করতাম তাহলে আমার নাতীকে বাঁচানো যেতো না।’

জানতে চাইলে ‘অনিচ্ছাকৃত ’ ভুল দাবি করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার বলেন, ‘এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। এটা ইচ্ছাকৃত কোন ভুল নয়। এটা অনেক বড় ভুল। তবে অনিচ্ছাকৃত।’

ইউনিকেয়ার হেলথ সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘যে টেস্ট করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ভুলে ডা. সীমা এবং প্যাথলজিস্ট দুইজনই দায়ী।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘ব্লাড গ্রুপ কোনভাবে ভুল করা সমীচীন নয়। এর জন্যে তো রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতো। এ ঘটনার তদন্ত করে সিভিল সার্জন মহোদয়ের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমার মনে হয়। কারণ এ ধরণের অসাবধানতায় রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো। এরকম ভুল করা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কিভাবে লাইসেন্স পায় এটাও আমার প্রশ্ন।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘লিখিতভাবে এটা আমাকে জানালে আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। বিষয়টি না জেনে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’

বাংলাধারা/আরএইচআর

আরও পড়ুন