সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কক্সবাজারে ৩০৫ মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নিয়েছে সনাতনধর্মালম্বীরা। পূজাকে ঘিরে তৈরি প্রতিমায় রংতুলির শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজারের প্রতিমা কারিগররা। রোববার মহালয়ার মাধ্যমে দেবির আগমন শুরু হয়েছে। আগামী এক অক্টোবর থেকে যাত্রা হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দেয়া কক্সবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের তালিকা মতে, এ বছর কক্সবাজারে নবগঠিত ঈদগাঁওসহ ৯ উপজেলায় ৩০৫টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। প্রতিমা ও ঘট পূজা মিলে কক্সবাজার সদর উপজেলায় (পৌর এলাকাসহ) ৪৯টি, ঈদগাঁওতে ২৬টি, রামুতে ৩২টি, উখিয়ায় ১৫টি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে-১টি, টেকনাফে ৬টি, মহেশখালীতে (পৌর এলাকাসহ) ৩১টি, কুতুবদিয়ায় ৪৫টি, পেকুয়ায় ৯টি ও চকরিয়া উপজেলায় (পৌর এলাকাসহ) ৯১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার শহরের সরস্বতী বাড়ী মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রবীণ মৃৎ শিল্পী নেপাল ভট্টাচার্যের কারখানায় তার দুই ছেলের নেতৃত্বে শিল্পীরা প্রতিমার পরিপূর্ণতায় শেষ আঁচড় দিচ্ছেন।
নেপাল ভট্টাচার্যের ছেলে প্রতিমা শিল্পী মিল্টন ভট্টাচার্য বলেন, স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই আমার বাবা এ পেশায় জড়িত। প্রতিবছর পূজায় আমরাই কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা তৈরির কাজ করি। ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্চমী। এ রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার পূর্ণতা আবশ্যক। খুবই ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে শুরু করেছি এ বছর পাওয়া ২৫টি প্রতিমা গড়ার কাজ। শহরে ৩টি ছারা বাকি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি শহরের বাইর থেকে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছি না। প্রতিমা সম্পন্ন করতে আমাদের কারখানায় দুই ভাগে ১২ জন কাজ করছেন। আশা করছি সঠিক সময়ে সকল প্রতিমা সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে।
প্রতিমা শিল্পীরা জানান, একটি প্রতিমা তৈরিতে এ বছর শিল্পীদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। প্রতিমা তৈরিতে ৪-৫ ভ্যান মাটি, খড়ের আউর ৫-৭ আঁটি, কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন। ভ্যান প্রতি মাটি ৫০০-৮০০ টাকা, প্রতি আঁটি খড় পাঁচশত থেকে ছয়শত টাকা, বাকি পণ্যে খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। একটি প্রতিমা তৈরিতে সময় লাগে ১০-১২ দিন। চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করলে একেকজন শিল্পী প্রতিমার একেক কাজে হাত দেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কক্সবাজার সদর উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, স্বরস্বতি বাড়ি ছাড়াও শহরের ঐতিহ্যবাহী ইন্দ্রসেন দুর্গাবাড়ি, কৃষ্ণানন্দধাম, কালী বাড়িতে শিল্পীরা প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শহরের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন মন্ডপ ঘোনার পাড়া শ্রী শ্রী কৃষ্ণানন্দধাম পূজা মন্ডপের সভাপতি সুমন দে আকাশ ও সাধারন সম্পাদক প্রমথ পাল লক্ষণ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও আড়ম্বরভাবে পূজা উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শৃংখলা বাহিনীর সাথে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম দিয়ে নিরাপত্তা বলয় থাকবে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারনে ব্যয় বহনে হিমশিম খাচ্ছি। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে সরকারীভাবে মন্ডপে সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন ও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী জানান তারা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি উজ্জ্বল কর বলেন, এ বছর কক্সবাজারের ৯ উপজেলায় ৩০৫টি পূজামণ্ডপে পূজা চলবে। ইতোমধ্যেই মন্দিরে বিভিন্ন কাজ শুরু হয়ে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পূজাকালীন সময়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার জেলার সব পূজামণ্ডপের তালিকা আমরা পেয়েছি। মণ্ডপগুলোতে পূর্বের মতোই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ব্যতিরেখেই পূজা সম্পন্ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ইতিমধ্যে আমরা ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পুলিশ-র্যাব সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সিসিটিভির আওতায় এনে মণ্ডপ স্থল নজরে রাখা হবে।













