৯ নভেম্বর ২০২৫

রামু ট্রাজেডির ১০ বছর/ সম্প্রীতিতেই কেটেছে আস্থার সংকট

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ পল্লী ট্র্যাজেডির ১০ বছর পুরণ হচ্ছে আজ (বৃহস্পতিবার)। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে গুজবের সূত্র ধরে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লীর ২৬টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল ধর্মান্ধ দুর্বৃত্তদল। পরেরদিন একই ঘটনার জেরধরে উখিয়া-টেকনাফে আরো ৭টি বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেয়া হয়। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতির ঐতিহ্যে ফাটল দেখা দেয় পুরো দেশে।

পুড়ে যাওয়া ঐতিহ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে দ্রুত সময়ে সুরম্য অট্টালিকা ও নিরাপত্তা বলয়ে পূর্বের সম্প্র্রীতি ফিরেছে-মুছে গেছে ক্ষতও। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে মামলার বিচারিক কার্যক্রমে কচ্ছপগতির কারণে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

অপ্রীতিকর এ হামলার দিবস উপলক্ষে আজ (বৃহস্পতিবার) রামুর চেরাংঘাটা মৈত্রী বিহার উপাসনালয়ে সকালে বিশেষ স্মরণ সভার আয়োজন হবে। ধর্মীয় অর্চনায় এতে সবার শান্তি কামনা করা হবে, এমনটি জানিয়েছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা নীতিশ বড়ুয়া।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ শীল প্রিয় মহাথের বলেন, ঘটনার দশ বছরে আমরা বাহ্যিক ক্ষত কাটিয়ে উঠেছি। কিন্তু এখনো বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় এখনো শঙ্কা থেকে যায়। কখন আবার ধর্মান্ধ এবং ধর্ম ব্যবসায়ীদের আক্রমনের শিকার হতে হয়। সরকার সাক্ষিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে অনেক সাক্ষি নিরাপত্তার কারণে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার চাইলে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে অপরাধী শনাক্ত করে বিচার শেষ করা যেত। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ধর্মব্যবসায়ীদের বিষয়ে সকল ধর্মপ্রাণ মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্তদের অসহযোগিতায় সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ সম্ভব না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম পিছাচ্ছে মন্তব্য করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, এ ঘটনায় করা ১৯ মামলায় ১৫ হাজার ১৮২ আসামির কম-বেশি সবাই জামিনে রয়েছেন। ৫২৬ জন গ্রেফতার হওয়ার পর আর বাকিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। সব মামলারই চার্জশিট হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় বিচার নিষ্পিত্তি নিয়ে অতটা আগ্রহী নন। তারা সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারলে দ্রæত বিচার নিষ্পত্তি করতে প্রস্তুত আদালত।

রামু বৌদ্ধ কল্যান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলক বড়ুয়া আপ্পু বলেন, বৌদ্ধপল্লী ট্যাজেডির হোতাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও সাক্ষীর কারণে গত ১০বছরেও মামলার চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়নি। তবে বিচারকার্য নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও সম্প্রীতিতে আস্থার সংকট অনেকটা কেটেছে। সরকার নিজ উদ্যোগে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করলে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করতে কেউ সাহস পাবেনা।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আইনজীবী ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলা শাখার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, বৌদ্ধপল্লী ট্র্যাজেডিতে রামুর সহস্রাব্দের গর্ব ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে’ যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল তা কেটেছে। আমাদের প্রত্যাশা প্রকৃত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হলে সম্প্রীতির জায়গাটা আরও সমৃদ্ধ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ- দ্রæত সময়ে দৃষ্টিনন্দন ক্যাং স্থাপন করে ক্ষতস্থান মুছে দেয়ায়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মোট ১৮টি মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। যেসব আসামি পলাতক রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে কোরআন অবমাননাকর ছবি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করে ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও ২৬টি বসতঘর। রামু থেকে এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে উখিয়া ও টেকনাফসহ চট্টগ্রামের পটিয়া পর্যন্ত। এক শ্রেণির ধর্মান্ধরা বৌদ্ধপল্লী ও মন্দিরে উদ্দেশ্যমূলক হামলা চালায়। সেই সময় পুড়ে যায় বিহারে থাকা হাজার বছরের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। তবে, অনাকাংখিত এঘটনার পরই সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগকে দিয়ে পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধমন্দিরগুলো অত্যাধুনিক সুরম্য অট্টালিকা হিসেবে গড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা বর্তমানে পর্যটনের একটি অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। গড়ে দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়িও।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ