২৪ অক্টোবর ২০২৫

ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড মৃত্যু

বাংলাধারা ডেস্ক »

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৬৫ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে আরও আট ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৬৫ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৯৭ জন ও ঢাকার বাইরে ২৬৮ জন।

বর্তমানে সারাদেশে দুই হাজার ৬৯৫ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ৯১৫ জন ও ঢাকার বাইরে ৭৮০ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ২৮২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ২৫৯ জন ও ঢাকার বাইরে ছয় হাজার ২৩ জন।

একই সময় সারাদেশে ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ২৯৯ জন ও ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার ২০৫ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৮ হাজার ২৬৫ জন ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৫ জন।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ৩৫ শতাংশই শিশু

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৭৫ জন। এরমধ্যে ৩৫ শতাংশই শিশু। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, মশা নিয়ন্ত্রণে কোথাও একটা ফাঁকফোকড় থেকে যাচ্ছে। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলছেন, ‘২০১৭ সালে দেশে ডেন-ওয়ান ও ডেন-টু সেরোটাইপ ডেঙ্গুর উপস্থিতি ছিল। এরপর ২০২১ সালে ডেন-থ্রি ছিল। এবার ঢাকার ডেন-ফোরের উপস্থিত পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে কক্সবাজারে ডেন-ওয়ান, ডেন-থ্রি ও ডেন-ফোর সেরোটাইপ ডেঙ্গু হচ্ছে। একাধিক সেরোটাইপে সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি।’

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. ইকরামুল হক জানান, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ শিশু। যাদের বয়স এক থেকে ১৮ বছর। ২০ বছরের বেশি আক্রান্ত হয়েছে ৬২ শতাংশ মানুষ। আর মৃতদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিশু। ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে মারা যান ৪৮ জন। ১৮ জন মারা যান ৩-৬ দিনের মধ্যে, ৬-৯ দিনে মধ্যে মৃত্যু হয় ৬ জনের। আর ৯-৩০ দিনে মারা গেছেন তিন জন।

মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১-১০ বছরের ১২ জন। ১০-২০ বছর বয়সের ১৪ জন, ২০-৩০ বছরের ১৬ জন, ৩০-৪০ বছরের ৮ জন, ৪০-৮০ বছরের ২৫ জন।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৫ জন। এরমধ্যে ৪৬ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ জন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ জন আর ঢাকার বাইরে ৪৮ জন। এরমধ্যে ১৮ জন রোহিঙ্গা।

কীটতত্ত্ববিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘মশা নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হলে তা মশার জন্য সহনশীল হয়ে পড়ে। তাই কীটনাশক কেনার আগে ৯০ শতাংশ মরবে কিনা সেটি নিশ্চিত হয়ে কেনা উচিত।’

ঢাকার পর বেশি আক্রান্ত কক্সবাজারে

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ঢাকার পর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৩৬৮ জন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত ২০ বছরের বেশি বয়সীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ড. আহমেদুল কবির।
তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ৩-৬ দিনের মধ্যে ১৮ জন, ৬-৯ দিনের মধ্যে ৬ জন এবং ৯-৩০ দিনের মধ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।

ড. আহমেদুল কবির জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করছেন ৪০ থেকে ৫০ বছরের মানুষ। ডেঙ্গুতে ঢাকার বাইরেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। আর এতে নারীদের মৃত্যু হার পুরুষের তুলনায় বেশি। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে আক্রান্তরা। ঢাকার বাইরে জেলার মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও কক্সবাজারে বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫১৭ জন। যা গত বছর ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন, ২০২০ সালে ছিল ১৪০৫ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৬২ জন। ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৭৭৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪১৫ জন। ঢাকার বাইরে ২৩২ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু নারীর ৪৬ জন, পুরুষ ২৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০১৯ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৯, ২০২০ মৃত্যু হয় ৭ জনের। আর ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের।

২০২০ সালে ১ লাখ ৮ হাজার ২০০ পিস ডেঙ্গু টেস্ট কিট (এনএস১) বিতরণ করা হয়েছে, ২০২১ সালে বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ পিস। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত কিট বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫০ পিস।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ডেঙ্গুবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি ট্রেনিং চলছে। চিকিৎসার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নিয়ে বসবেন বলেও জানান ড. আহমেদুল কবির।

 

আরও পড়ুন