২৩ অক্টোবর ২০২৫

মিরসরাইয়ে ‘সিত্রাং’ মোকাবেলায় প্রস্তুত ৪৬ সাইক্লোন সেন্টার

শিহাব উদ্দিন শিবলু, মিরসরাই »

সিত্রাং মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুটি পৌর এলাকায় প্রশাসনের উদ্যোগে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ সংক্রান্ত এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাত থেকে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সময় বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি বাড়ছে। সিত্রাং মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

সভায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এম আলাউদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান, মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন, উপজেলা সিপিপি টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার, করেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন, জোরাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টার, উপজেলার সকল দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, সিত্রাং মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে ৬ নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকায় উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বেশি ঝুঁকপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছে উপকূলীয় ও চমানপুর ইউনিয়ন আংশিক, ইছাখালী, কাটাছরা আংশিক, মিঠানালা, মঘাদিয়া, মায়ানী আংশিক ও সাহেরখালী ইউনিয়নকে। উপজেলায় মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে ৪৬টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশ, আনসার, কোস্টগার্ড, সিপিপি, ফায়ার সার্ভিস টিম কাজ করছে। পুরো উপজেলাজুড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা করা হয়। এদিকে বৃষ্টিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল কমে গেছে। এতে করে সকাল থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মস্থলমুখী মানুষদের। অনেক মানুষ গাড়ির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সামাজিক সংগঠন দুর্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসান সাইফ উদ্দিন জানান, সিত্রাং মোকাবেলায় দুর্বার সংগঠনের সকল সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়াও সংগঠন কার্যালয়ের ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের পতাকা উত্তোলন ও সকাল থেকে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

মিরসরাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ন আশরাফ উদ্দিন সোহেল বলেন, সকলা সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে প্রস্তুত রয়েছে।

সিপিপি মিরসরাই উপজেলার টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার বলেন, ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় আমাদের ৮০ টিম মাঠে থাকবে। ৮০ টিমে এক হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। যারা নিজ নিজ ইউনিটে প্রচারণার কাজ করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, উপজেলায় অধিকাংশ আমন ধান প্রায় পেকে গেছে। দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে দ্রুত ফসল কেটে ঘরে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরাঞ্জামসহ আমরা ১৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করেছি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, ঝুঁকিপূণ ইউনিয়নগুলোর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এখন ডিসি স্যারের সাথে জুম মিটিং করছি। মিটিং শেষে স্যার যে নির্দেশনা দেবে তা আমরা জানিয়ে দেবো।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এগুলো সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠন বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

কোস্টগার্ড মিরসরাই ষ্টেশনের কন্টিজেন্ট কমান্ডার জহিরুল ইসলাম জানান, মিরসরাইয়ের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে সাবধান করতে মাইকিং করা হচ্ছে। তাদের নিরাপদে থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। উপকূলে ঝুঁকির মধ্যে থাকা বাসিন্দাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। যদি ঘূর্ণিঝড় আমাদের এলাকায় আঘাত হানে তাহলে তাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে

আরও পড়ুন