বাংলাধারা প্রতিবেদক »
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও বলেছেন, রেলমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে আঘাত দিয়ে সিআরবিতে কোনো হাসপাতাল করা হবে না। আমি আন্দোলনকারীদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। চট্টগ্রামের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলের প্রচেষ্টায় সিআরবিতে হাসপাতালের বিষয়টা পুনর্বিবেচনার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার জনগণের সরকার। জনগণের কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে, জনগণের সমর্থন না থাকলে সরকার গণদাবি মেনে নেয়। সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি এখানে হাসপাতাল করা হবে না।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে সিআরবি চত্বরে ‘নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি এবং সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন।
নওফেল বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকেও আমি ধন্যবাদ জানাই যে, তারা গায়ের জোরে কিছু করার চেষ্টা করেনি। যারা হাসপাতাল করতে চেয়েছেন তাদের বলব, চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ে আঘাত দিয়ে তাদের হৃদয়ের চিকিৎসা করা নৈতিকভাবে সঠিক হবে না। জনগণের দাবিকে, জনগণের অনুভূতিকে সম্মান জানাতে হবে। কারণ এই আন্দোলন সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর সকল জনগণের আন্দোলন ছিল।’
রেলমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘রেলমন্ত্রী আমাদের অনুরোধ-দাবি সাদরে গ্রহণ করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে আঘাত করে সিআরবিতে কোনো হাসপাতাল করা হবে না। তিনি জনগণের জন্যই রাজনীতি করেন। তিনি জনগণের ভাষা বোঝেন, আবেগ-অনুভূতিকে সম্মান করেন।’
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের বিজয় হয়েছে। এই বিজয়কে ধরে রেখে জনগণের কাছে একটা বার্তা দিতে হবে যে, শেখ হাসিনা সকল মানুষের অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার পরিচালনা করেন। ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে আমাদের নেত্রী চট্টগ্রামবাসীকে সম্মান জানিয়ে প্রথম জনসভার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করবেন। আমরা উৎসবমুখর একটি জনসভার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি। চট্টগ্রামবাসী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।’
তিনি বলেন, ‘সিআরবির জায়গা রেলওয়ের থাক। সিটি করপোরেশনকে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দেওয়া হোক। আমরা সুন্দরভাবে এটাকে সাজাবো। বঙ্গমাতা ফজিলতুন্নেছা মুজিবের নামে এখানে উদ্যান করা হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঢাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সংগঠক ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবং সাংবাদিক ঋত্বিক নয়নের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনূচ ও মাহফুজুর রহমান, সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, জাসদ নেতা জসীম উদ্দিন বাবুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় সিআরবিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় ১২ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের জন্য।
দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয় প্রকাশ পেলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। ২০২১ সালের জুলাইয়ে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উঠে এলে আবারও সোচ্চার হন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালে রাস্তায় নামে মানুষ।
এরপর ‘নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’ গঠন করে ধারাবাহিকভাবে প্রায় দেড় বছর ধরে সিআরবি এলাকায় নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল।













