খালেদ মনছুর, আনোয়ারা »
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, নদীর চর উন্মুক্ত থাকবে। সবাই তা সমভাবে ব্যবহার করবে। কোনো শিল্পায়নের নামে বা ব্যক্তিগতভাবে দখল করা যাবে না। আমরা নদী ও চর ভরাট করে কর্ণফুলী ড্রাইডক নির্মাণ করার প্রমাণ পেয়েছি। একনেকে অনুমোদন ছাড়া নদীর চর বেজা বা বনবিভাগ কাউকে দীর্ঘ মেয়াদী লিজ দিতে পারে না। সূর্যের আলো, বাতাস যেমন বিক্রি করা যায় না, তেমনি নদীর চরও বিক্রি বা লিজ দেয়া যায় না।
এসময় কমিশনের চেয়ারম্যান প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি কন্টেইনার ডিপো করবেন নদীর উপরে নিজস্ব জায়গায় করেন। নদীর চরে কেন করবেন? চন্দ্র-সূর্য যখন একসাথে টার্ন নেয় সে সময় যে জোয়ার হয় সেই জোয়ারের পানির অংশ পর্যন্ত নদীর চর। সে হিসেবে আমাদের কাছে আজকের পরিদর্শনের পর প্রতীয়মান হয় যে, মেরিন একাডেমি সড়কের পশ্চিম পাশ থেকে কর্ণফুলী নদীর চর। এর বাইরে যারাই দখল করেছে সবগুলো অবৈধ। আমরা দৃশ্যমান কিছু করতে চাই। সংস্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে শীঘ্রই আমরা এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মেরিন একাডেমির জেটির দুই পাশের নদীর চর দখল করে কর্ণফুলী ড্রাইডকের কন্টেইনার ডিপো নির্মাণের বিরুদ্ধে মেরিন একাডেমির কমান্ডার ড. সাজিদ হোসেনর এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, নদীর জমি ১নং খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা আছে। সরকারের এই সম্পত্তির মালিক সর্বসাধারণ। এই জমি রক্ষা করার দায়িত্ব কালেক্টর বা ডিসি, ইউএনও,এসিল্যান্ডসহ সংস্লিষ্টদের। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ছাড়া নদীর চরে কাউকে দীর্ঘ মেয়াদী লিজ দেওয়া যাবেনা, কমার্শিয়াল কাজেও এই জমি ব্যবহার করা যাবে না। এটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের বিচারপতি খাইরুল হকের একটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। সুতরাং বেজা কর্ণফুলি ড্রাই ডককে এই জমি কিভাবে লিজ দিল— তা আমাদের জানা নেই। এই ব্যাপারে আমরা সকল ডকুমেন্টস পর্যালোচনা করে দেখব। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।
এসময় বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে গাছকাটা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বদলপুরা এলাকার মেরিন একাডেমি সড়কের পশ্চিমের অংশের পর থেকে বালুচর ও নদী। খতিয়ানেও এটি নদী হিসেবে শ্রেণীভুক্ত রয়েছে। কাজেই বনবিভাগ চাইলে এই চরে গাছ লাগাতে পারে। কিন্তু কঠিন যুক্তি ছাড়া বনবিভাগের গাছ কাটার অনুমতি দিতে পারে না।
এসময় মেরিন একাডেমির কমান্ডার অধ্যক্ষ ড. সাজিদ হোসেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে বলেন, মেরিন একাডেমির জেটির দু’পাশের জমিটুকু আমরা মেরিনদের খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণের সুবিধার্তে সে সময়ের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলাম। জেটির দুই পাশের চরের জমিটা আমাদের বিশেষ প্রয়োজন।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন কমিশনের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ করে বলেন, নদীর চরের শত শত গাছ নির্বিচারে কর্তন করা হয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহল এটি দখল করে কন্টেইনার ডিপো করার চেষ্টা করছে। এলাকার স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করছি।
কর্ণফুলী ড্রাইডকের ব্যবস্থাপক মো. সোলাইমান জানান, কর্ণফুলী নদীর চর দখল করে কেইপিজেড, ইউনাইটেড গ্রুপ, সয়া ইন্ডাস্ট্রিজ, কাফকোসহ আরো অনেকে ইন্ডাস্ট্রি এবং স্থাপনা নির্মাণ করেছে। আমরাও বেজার কাছ থেকে চর ইজারা নিয়ে ড্রাইডক নির্মাণ করছি। এখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন কমিশন যদি শুধু আমাদেরটা নিয়ে আপত্তি করে সেটা একতরফা অবিচারের পর্যায়ে পড়বে।
এসময় সরেজমিনে উপস্থিত থেকে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, গাছ কাটার জায়গাসহ কর্ণফুলী ড্রাইডকের বর্তমান স্থানটা আমরা বেজাকে লিজ দিয়েছি। বেজা কর্নফুলী ড্রাইডককে নাকি লিজ দিয়েছে। কর্ণফুলী ড্রাইডক নাকি বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে গাছগুলো কর্তন করেছে। তবে এই বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমরা এই মুহুর্তে দেখব, কর্ণফুলী ড্রাইডককে যে জায়গাটা লিজ দিয়েছে সেটার বাইরে তারা নদী ভরাট করেছে কিনা। বাকীটা নদী রক্ষা কমিশন দেখবে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আনোয়ারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন, মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসেনসহ নদী রক্ষা কমিশনের সার্ভেয়ার ও বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং কর্ণফুলী ড্রাই ডক এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় সকলকে সাথে নিয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কর্ণফুলী ড্রাইডকসহ কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।