২৮ অক্টোবর ২০২৫

প্রিয় শিক্ষককে ব্যতিক্রমধর্মী বিদায়ী সংবর্ধনা দিল শিক্ষার্থীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

৩৪ বছরের দীর্ঘ চাকরি জীবনের ২২টি বছর এক নাগাড়ে ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক স্যার। দীর্ঘ এ পরিক্রমায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে তদারকি ও স্বীয় তাগিদে গৃহে প্রতিনিয়ত খোঁজ রেখে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি ও পিএসসিতে পাশের হারে উপজেলার অন্য সব প্রাথমিককে পেছনে রেখেছেন তিনি। এ কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিকে সন্তানকে ভর্তি করানো ছিল যেন আরাধ্য।

সেই গুণী শিক্ষক রফিক স্যার অবসরে গেছেন ১২ নভেম্বর। এদিন পা ধুয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। তাকে পরানো হয় উত্তরীয় ও ব্যাজ। দেয়া হয় সম্মাননা উপহারও। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিদায়ী সংবর্ধনা শনিবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহীন জাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. বেলাল হোছাইন ও মোহাম্মদ হানিফ মিয়া, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সোহেল ইকবাল, ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নুরুল আজিম, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত, ঈদগাঁও জাহানারা ইসলাম বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজার সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার, মাইজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীন, মুক্তারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, সংবর্ধনা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব বদিউর রহমান, শিক্ষক নেতা মামুনুর রশিদসহ সংশ্লিষ্টরা।

বক্তারা এই গুণী শিক্ষকের দীর্ঘ ৩৪ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে তার নানা সফলতার কাহিনী তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর ব্যয় করা জীবনাচার থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সেভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপে দিতে অন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানান অভিভাবক ও বক্তারা।

অনুষ্ঠানে নাইক্ষনছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্জন ডা. সাদ্দাম হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সরকারি শিক্ষকবৃন্দ, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা ও পিটিএ কমিটির সদস্যবৃন্দ, প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অধ্যয়নরত ও সাবেক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ঈদগাঁওর ইসলামাবাদ গজালিয়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ১৯৮৭ ঈদগড় হাছনাকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে চাকরি জীবন শুরু করেন। এরপর রামুর চাকমারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের পর ২০০০ সালে ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি ১৯৯৭ সালপ প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার, ২০০৪ সালে বিভাগীয় ও জেলা শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক পুরস্কারসহ নানাভাবে পুরস্কৃত হন। তার কর্মকালীন সময়ে স্কুলে প্রতিবছর একাধিক ট্যালপন্টপুল ও সাধারণ বৃত্তি, পিএসসিতে একাধিক এ প্লাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে। এ স্কুল থেকে পাশ করা অনেক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, প্রশাসনিক নানা ক্যাডারে যুক্ত হয়েছেন। রফিক স্যারের সহধর্মিণী ঈদগাঁও জাহানারা ইসলাম বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

আরও পড়ুন