বাংলাধারা প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করার জেরে আসামী ছিনিয়ে নিতে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তদের একটি দল। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নাজমা আক্তার (৩০) এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছে ২ পুলিশ।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল হোসেন।
জানা যায়, পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ হানিফ নামের একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তাকে ফাঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে নিতে বেশকিছু হিজড়া সাথে নিয়ে এক থেকে দেড়শো যুবক কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে হানিফকে নিয়ে যায়৷ হামলায় বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়।
ওসি বলেন, মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হামলা হয়েছে পুলিশ ফাঁড়িতে। এই ঘটনায় আহত এক নারীর মৃত্যুর খবর জেনেছি। তবে চমেক হাসপাতালে গিয়ে লাশ পাওয়া যায় নি। হামলার ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় নাজমা আক্তার নামের এক মহিলা মারাত্মকভাবে আহত হলে তাকে চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় । চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
সুত্রমতে, হিজরাদের একটি দলকে কাজে লাগিয়ে কালুরঘাট এলাকার এক প্রতাপশালী বালু ব্যবসায়ী ড্রেজিং এবং বালুর মহাল ইজারার আড়ালে মাদকের রমরমা বাণিজ্য করে আসছে । স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্কের কারণে কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশের ওই বালুর মহালকে নদীপথে ইয়াবা পাচারের ঘাট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে চক্রটি। কালুরঘাট বোয়ালখালী এলাকায় দুর্দান্ত প্রতাপশালী এই বালু সিন্ডিকেটটি।
কিছুদিন আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের লাইভে আমরিন এন্ড ব্রাদার্সের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মনসুর আলম পাপ্পি ওই বালুর মহালকে ঘিরে ‘ইয়াবা’সহ নানা অবৈধ ব্যবসা ব্যবসার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনিও ‘রেলওয়ে মুরিং ঘাট’ নামের বালুর মহালের সত্ত্বাধিকারী।
ফেসবুক লাইভে পাপ্পি অভিযোগ করেন, উনি (বালু মহালের মালিক মোহাম্মদ আলম ববি) এমন একটা সিস্টেম করছে কর্ণফুলী নদীতে উনার ড্রেজার ছাড়া আর কারো ড্রেজার চলবে না। সরকারের কোন অনুমতি ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে ড্রগ ইয়ার্ড। কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে রেলওয়ে থেকে ইজারা নেয়া ‘রেলওয়ে মুরিং ঘাট’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে এটা টেন্ডার হয়। ওই মুরিং ঘাটের মধ্যে শুধু একটি অনুমোদন থাকবে, মানুষ চলাচল করবে। ওই জায়গায় বালু ব্যবসার কোন অনুমতি সরকারিভাবে নাই। কিসের ওই শক্তিতে, তিনি এত বড়, দিন দুপুরে কালুরঘাট সেতু দিয়ে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াত এই এই ব্যবসা পরিচালনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভাল জানেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ইয়াবাসহ হানিফ নামের একজনকে আটকের জের ধরে হিজরাদের দিয়ে হামলা চালানো হয় পুলিশ ফাঁড়িতে। এসময় ওই বালু মহাল থেকে বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলিও করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশের একটি অনুমোদিত মাওয়া ডগ ইয়ার্ড, মাওয়া বাগানবাড়ি ও মুরিং ঘাট নামের একটি বালুর মহালে ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেটের আঁখড়া গড়ে তোলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ পরিচয়ে এক ড্রেজিং ব্যবসায়ীর ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের পাইপ চুরির চেষ্টা করে আলোচনায় আসে চক্রটি। এর আগে অন্য এক ব্যবসায়ীর কোটি টাকার ডেজ্রার ভাড়া নিয়ে কর্ণফুলী নদীর একটি প্রান্তে ডুবিয়ে রাখে একই চক্র।
এরশাদ নামের বালি মহালের এক বালি বিক্রেতা জানান, ইয়াবা পাচারকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পরে আসামী ছিনিয়ে নিতে হিজরাসহ বেশ কিছু যুবক অস্ত্রশস্ত্রসহ পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বোয়ালখালী শীর্ষ সন্ত্রাসী বিশু দাশ, বিএনপি নেতা শাহ সরওয়ার, এরশাদ, ওয়াসিমের নেতৃত্বে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয় ।
এ সময় বেশ কিছু যুবককে হিজড়াকে সাজিয়ে হামলার জন্য তৈরি করেন বিশু। পরে পার্শ্ববর্তী বালির মহালে অবস্থান নেন সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে পুলিশের উদ্দেশ্যে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এ সময় বেশ কিছু দেশী-বিদেশী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ইয়াবাসহ হানিফকে আটক করে র্যাব। ওইসময় হানিফের হিজড়া বাহিনী সড়ক অবরোধ করে সিনেম্যাটিক স্টাইলে তাকে ছিনিয়ে নেয়।













