১০ নভেম্বর ২০২৫

আবারও পেছালো নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

বাংলাধারা ডেস্ক »

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১৮ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও ফের পিছিয়েছে। ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের পরই অনুষ্ঠিত হবে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একথা জানান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

এর আগে, চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ১৮ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দলটির জাতীয় সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্ধারিত তারিখে সম্মেলন হচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সম্মেলন ১৮ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হচ্ছে না। এ বিষয়ে গতকাল (রোববার) জনসভা শেষে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনারা বলেছেন, ওয়ার্ড এবং থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করে তারপর নগর কমিটির সম্মেলন করতে। যেহেতু আমরা ওয়ার্ড ও থানাগুলোর সম্মেলন শেষ করতে পারিনি, ১৮ ডিসেম্বর নগর সম্মেলনও হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন- প্রয়োজনে জাতীয় সম্মেলনের পর নগর সম্মেলন করতে।’

একবছর আগে থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হয়। এর মধ্যে, ঢাকাঢোল পিটিয়ে কয়েকদফা নগর কমিটির সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করা হলেও শেষপর্যন্ত হয়নি।

২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আওয়ামী লীগ। সেই সম্মেলন নিয়ে সংঘাত ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্র থেকে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তৃণমূলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে পরস্পর বিরোধী দুটি ধারার বিরোধ আরও জোরালো হয়। দুটি ধারার একটির নেতৃত্বে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন আছেন। আরেকটি ধারা প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাদের সঙ্গে আছেন।

ইউনিট সম্মেলনের শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, মাহতাব-নাছিরের একক কর্তৃত্ব ও ইচ্ছায় তৃণমূলে সম্মেলন হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিটে মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কৌশলে সদস্য করা হয়নি। তাদের বাদ দিয়েই সম্মেলন করে এক নেতার অনুসারীদের মাধ্যমে কমিটি করে ফেলাহয়েছে।

এ অবস্থায় ইউনিট সম্মেলন নিয়ে বিরোধ নিরসনে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্র থেকে পাঁচ সদস্যের একটি ‘রিভিউ কমিটি’ গঠন করে দেয়া হয়েছিল। কমিটির সদস্যরা হলেন- নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর কমিটির সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সহ সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও জহিরুল আলম দোভাষ।

রিভিউ কমিটি কেন্দ্রের অনুমতিক্রমে ১৫ সাংগঠনিক থানার জন্য নগর আওয়ামী লীগের একজন করে নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে ১৫টি সাংগঠনিক টিম গঠন করে। তাদের ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অভিযোগ যাচাইবাছাইপূর্বক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে তৃণমূলের সম্মেলন সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বিরোধ মেটেনি। ফলে ইউনিট সম্মেলন শেষ হলেও ওয়ার্ড এবং থানাগুলো ঝুলে আছে।

এ অবস্থায় চলতি বছরের ২৫ মে চট্টগ্রামে এক সাংগঠনিক সভায় এসে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ঘোষণা দেন। সেটা না হওয়ায় গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নগরীর ১৫ থানার সাংগঠনিক টিমের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ৪ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সময় বেঁধে দেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

কিন্তু ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভার কারণে স্থগিত ঘোষণা করে ১৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। সেই তারিখেও সম্মেলন না হওয়ার কথা জানালেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।

২০০৫ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। এতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানু।

দানু মারা যাবার পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়, যাতে মহিউদ্দিনকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর প্রথম সহ সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

আরও পড়ুন