৬ নভেম্বর ২০২৫

বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলন করলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বীর বাঙালির অহংকার’ স্লোগানে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের গোলচত্বরে বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

বিজয় শিখার উদ্বোধন করেন অপারেশন জ্যাকপটের অধিনায়ক কমোডর এ ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম ও বীর বিক্রম, প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিএমপি পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। অতিথিরা বিজয় শিখার অগ্নিশলাকা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার প্রতিষ্ঠাতা চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানুর ছেলে কাজী রাজেশ ইমরানের হাতে হস্তান্তর করেন। তারা তা বিজয় শিখার টাওয়ারে স্পর্শ করা মাত্রই বিজয় শিখা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।

কমোডর এ ডব্লিউ চৌধুরী নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, হে নতুন তোমরা প্রস্তুত হও, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ।

বিজয় শিখা মঞ্চে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে অতিথিরা বিজয় মঞ্চের পাশে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার পতাকা উত্তোলন করেন। এর পরপরই বিজয় মঞ্চে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শেষে ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এত ত্যাগ, এত রক্তঞ্জলি আর কোথাও নেই। এমনকি একটি ঘাতক অপশক্তি যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, যাদের কোনো সভ্যতা মর্যাদা ও সুস্থতা নেই। বর্বরতা, বিকৃতি, পাশবিক দস্যুতা তাদের রক্তের প্রতিটি কণায় মিশে ছিল বলেই আমরা মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ডুবে ছিলাম। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র হয়েছিল এবং হানাদারদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পুলিশ বাহিনী প্রথম প্রহরে মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের সঙ্গে ভূমিকা রাখেন। ইতিহাসের পাতায় চিরদিন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে পুলিশ বাহিনী সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা একটি সশস্ত্র সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি যুদ্ধ করতে করতেই সশস্ত্র হয়ে উঠে এবং তাদের কাছে হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক পরাজয় স্বীকার করাটা ইতিহাসেরই একমাত্র দুর্লভ দৃষ্টান্ত। এটাও পৃথিবীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলমের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ।

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিণী নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আবদুল ওয়ারিশ, উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা পান্টুলাল সাহা, মহিউদ্দীন রাশেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান স্কোয়াডের আহবায়ক বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন প্রমুখ।

প্রতিবছরের মতো এবারও গত ১ ডিসেম্বর নগরের আউটার স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী মেলা। প্রবেশ টিকিট ছাড়া এ মেলায় নগরবাসী গৃহস্থালি সামগ্রী, খেলনা, গহনা, মুড়ি মুড়কি, শাল, ব্লেজার, কার্পেট, আচার ইত্যাদি সংগ্রহ করছেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয় এই বিজয় মেলা। এবার মেলার ৩৪তম আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। এই মেলার ধারাবাহিকতা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, বীর বাঙালির অহংকার’ স্লোগানে উদযাপিত হবে এবারের বিজয় মেলা।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ