৮ নভেম্বর ২০২৫

সুদে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ধার করল ইসলামী ব্যাংকসহ ৫ ব্যাংক

বাংলাধারা ডেস্ক »

নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। তাদের মোট ১৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার তারল্য সুবিধা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

এতে সুদ হার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যদিও শরিয়াহ ব্যাংকগুলোকে সুদের ওপর টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদের পরিবর্তে মুনাফার ভিত্তিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিল, বন্ড লিয়েন রাখতে হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ধার দিতে পারে না।

জানা গেছে, সুকুক বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলো নির্ধারিত পরিমাণ টাকা ধার নিয়ে নিয়েছে। তার পরও ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট কাটাতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নির্ধারিত নগদ জমা হার (সিআরআর) রাখতে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ‘প্রমিসারি ডিমান্ড নোট’ প্রদান করে টাকা ধার করতে হয় ব্যাংক পাঁচটিকে। এর মাধ্যমে যে কোনো উপায়ে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ব্যাংকগুলো।

আর বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনের জন্য এ টাকা ধার দেয়, যার মাধ্যমে ব্যাংক পাঁচটি গত ২৯ ডিসেম্বর বছরের শেষ কার্যদিবসে চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে (সিআরআর) সক্ষম হয়। জানা গেছে, সিআরআর ও এসএলআর (বিধি বদ্ধ জমা) হলো মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। অবশ্য আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থায় এ দুই হাতিয়ারকে বলা হয়ে থাকে গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার অন্যতম মাধ্যম। যাতে একটি ব্যাংক আমানতের পুরোটাই ঋণ না দিয়ে কিছু অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের সাড়ে ৫ শতাংশ এসএলআর ও ৪ শতাংশ সিআরআর রাখতে হয়। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জন্য দুটি মিলে যা হয় ১৭ শতাংশ।

তবে বর্তমানে তারল্য সংকটের কারণে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে দৈনিকভিত্তিতে আমানতের ন্যূনতম সাড়ে ৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হয়। আর দ্বিসাপ্তাহিক ভিত্তিতে জমা রাখতে হয় ৪ শতাংশ অর্থ। চাহিদা অনুযায়ী জমা রাখতে ব্যর্থ হলে গুনতে হয় জরিমানা।

এর আগে, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর তারল্য ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এ ছাড়া, ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি চলতি ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে এই ৫ ব্যাংকের ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ ও আদায়ের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব ব্যাংক নামে-বেনামে আগ্রাসী বিনিয়োগ করেছে, যা আদায় হচ্ছে না। আবার অনেক আমানতকারী জমানো টাকা তুলে নিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক; দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর অন্যতম অর্থ জোগানদাতাও। এই ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়ায় অন্য ইসলামী ব্যাংকগুলোও একই সংকটে পড়েছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ