৮ নভেম্বর ২০২৫

খালের ভাঙনে নিচিহ্ন চলাচলের রাস্তা, দেখার কেউ নেই

বোয়ালখালী প্রতিনিধি »

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ছন্দারিয়া খালের ভাঙনে নিচিহ্ন হয়ে গেছে পৌরসভার নবাব আলী চৌধুরী বাড়ির রাস্তাটি। বালুর বস্তা ও কাঠের গুড়ি দিয়ে কোনো রকমের পা ফেলে যাতায়াত করেন এলাকাবাসী। দিন দিন ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় ভিটে মাটি টিকিয়ে রাখা এখন দায় হয়ে পড়েছে। সড়কটি বহু আগে খালের পেটে চলে গেছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় এ জনপদের ৪ শতাধিক পরিবারের বসত বাড়ি-উঠোন।

জানা গেছে, উপজেলার আরকান সড়কের আমতল হয়ে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এ জনপদ অবহেলিত রয়েছে বছরের পর বছর। কর্ণফুলী নদীর শাখা খাল ছন্দারিয়া। এ খালের পাড় ঘেঁষা এ জনপদে শুধু হাহাকার। ভাঙন আর জোয়ারের পানিতে জীবনযাপন করেন এই এলাকার মানুষ। সম্প্রতি খালের ভাঙনে ভিটে মাটি হারিয়েছেন ওই এলাকার মো. কামাল, মো.জামাল, মো. দিদার ও মো. সোলাইমানসহ অনেকে। এখন পরিবার নিয়ে ভাড়া ঘরে থাকেন তারা। বর্ষা মৌসুমে তীব্র হয় খালের ভাঙন, জোয়ারের পানিতে বাড়ে দুর্দশা। নির্ঘুম রাত কাটে নবাব আলী চৌধুরী বাড়ির মানুষগুলোর। ঘরের বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে দিনের পর দিন এ কস্ট ভোগ করে চলেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতল থেকে প্রায় ১ কিলোমিটারের নবাব আলী চৌধুরী সড়কটির প্রায় অংশ খালের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। খালের দক্ষিণ পাড় ও উত্তর পাড়ে সমানতালেই ভাঙন রয়েছে। উত্তরপাড়ে কধুরখীল ছন্দারিয়া বড়ুয়া পাড়া। বড়ুয়া পাড়ার বেশকয়েকটি বাড়িঘর খালের মাঝে বিলীন হয়েছে গেছে। ওই পাড়ারই বাসিন্দা ছিলেন দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সাংবাদিক বিমলেন্দু বড়ুয়া। খালটির দক্ষিণ পাড়ের নবাব আলী চৌধুরী বাড়ির ভিটেমাটিও ভাঙনের কবলে। এ বাড়ির মেঠো সড়কটি খালে বিলীন হয়ে গেছে। কোনো রকমে পা ফেলার মতো জায়গা এখনো টিকে আছে। এই মেঠোপথটিতে সংস্কার তো দূরের কথা কখনো কেউ এক ঝুঁড়ি মাটি দিয়েছেন এমন তথ্য জানাতে পারেননি স্থানীয়রা। তবে সড়কটির আমতল এলাকার কিছু অংশে দেখা যায় ব্রিক সলিন।

স্থানীয় বাসিন্দা বেবি আকতার ও মো. আজাদ বলেন, এ মেঠোপথ দিয়ে অটোরিকশায় চলাচল করা যেতো। এখন পায়ে হেঁটে চলাচল করা দায় হয়ে গেছে। এ পথ দিয়ে অসুস্থ মানুষ ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বারবার সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসলেও কিছুতে কিছু হয়নি। খালের ভাঙনে সড়কটি তো গেছেই এখন ভিটে মাটির হারানোর অপেক্ষায় আছি। তারা জানান, গত বছর ৪টি পরিবার ভিটে মাটি হারিয়েছেন। ভাঙনের কবলে রয়েছে আরো ১০-১২টি পরিবার।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খালটি পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। এলাকাটি খালের ভাঙন থেকে রক্ষায় গাইড ওয়াল ও ব্লক দেওয়া দরকার। এতো বড় বাজেটের কাজ বোয়ালখালী পৌরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে পৌরসভা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছন্দারিয়া খাল ছাড়াও উপজেলার বোয়ালখালী খাল, রায়খালী খাল, ভারাম্বা খাল, নাজিরখালী খাল ও কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে রয়েছে তীব্র ভাঙন। এসব খাল ও নদীর ভাঙনে প্রতিবছরই বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদী ও সংযুক্ত খাল সমূহের বিভিন্ন স্থান ভাঙন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণে ৭ দশমিক দুইশ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৪৪ কোটি ৭৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকার একটি প্রকল্প প্রোফাইল (ডিপিপি) তৈরি করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপজেলার ১ লাখ ২১ হাজার লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবেন বলে উল্লেখ করা হয়। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিলো গত বছরের ১ জুলাই এবং ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি হয়ে থাকায় আলোর মুখ দেখেনি।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর বোয়ালখালীতে কর্ণফুলীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। এ সময় স্থানীয় সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন। নদীর ভাঙনরোধে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ