৬ নভেম্বর ২০২৫

রামুতে যুবককে হত্যা করে গরু ডাকাতি

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

কক্সবাজারের রামুতে যুবককে হত্যা করে ডাকাতদল কর্তৃক দুটি গরু লুটের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১১ জানুয়ারি) ভোর রাত ৩টার দিকে রামু থানা ভবনের নিকটবর্তী গ্রাম ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের অফিসেরচর চরপাড়া নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

নিহত মীর কাশেম (৩২) ফতেখাঁরকুল অফিসেরচর এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।

লুট হওয়া গরুগুলোর মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, রাত ৩টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তার গোয়াল ঘরে থাকা ৭টি গরু নিয়ে যায়। তার মেয়ে প্রাকৃতিক ডাক সারতে উঠে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। তার চিৎকারে বাড়িতে থাকা জামাতা ফারুকসহ পরিবারের সদস্যরা ছুটোছুটি শুরু করে। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান ডাকাতদল ৭টি গরু গাড়ি তুলতে শুরু করে। এসময় তারা লুট করা গরুগুলো ডাকাতদলের কবল থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ডাকাতদল ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেও তা লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান ফারুক।

তিনি আরো জানান, নিহত মীর কাশেম তার ভাতিজা। রাতে ঘটনার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। সকালে স্থানীয়রা মীর কাসেমের মৃতদেহ এলাকার সবজি ক্ষেতে দেখতে পান। ধারণা করছি রাতে ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে যান। মীর কাশেমের দুহাত পেছনে, মুখ, চোখ, এবং পা জোড়া বাধা অবস্থায় পাওয়া যায়।

সকালে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।

গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার জানান, ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১ঘন্টারও বেশী পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা বাড়ির সদস্যদের ৯৯৯-এ কল করায় তাদের বকাঝকা করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন- চুরি হলে আমরা কি করবো? ডাকাতি হলে আসতাম। এসময় স্কুল ছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- তুমি ক্লাস নাইনে পড়, নাইন বানান জানো? তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি। সকাল ১০ টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, মীর কাশেম কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন টাইপের ছিল। বাড়ির টুকটাক কাজ করার পাশাপাশি রাত-বিরাতে রাস্তায় হাঁটাচলা ছিল তার নিত্য অভ্যাস। অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করতো। ধরণা করা হচ্ছে, ডাকাতদল গরু লুট করতে এলে দেখে ফেলে। গভীর রাতে তাদের দেখে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিলো সে। এজন্য ডাকাতরা তাকে হাত-পা-মুখ বেঁধে মারধর করে হত্যা করেছে।

মোহাম্মদ আলীর জামাতা ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দুজন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেঁধে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় তিনি একজন ডাকাতকে ধরে রাখলে তাদের ৪ সহযোগী ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড় সাইজের দুটি গরু নিয়ে ডাকাতদল গাড়িযোগে সটকে পড়ে। বাকি ৫টি গরু দিকবিদিক পালিয়ে বাঁচে।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে তিনি মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে সকালে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

রাতে ৯৯৯-এ কল পেয়ে ঘটনা স্থলে পুলিশ যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে বকাঝকার বিষয়ে ওসি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন গরু নিয়ে যাওয়া গাড়ির পেছন পেছন দৌড়ে থানায় আসে। তখন আমারাই পরে তাদের বলেছি থানায় কেন একটা কল দেয়া হলো না? এরপর তারা বাড়ি চলে যায়। পরে আবার তারা ৯৯৯-এ কল দিয়ে ঘটনাস্থলে আমার অফিসার গেছেন। তারা বকাঝকা করার প্রশ্নই আসে না। হয়তো এটা বলতে পারে- আগে যেহেতু থানায় কথা হয়েছে তাহলে আবার কেন ৯৯৯ এ কল দিতে হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, রামুতে গরু লুট ও এক যুবকে মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি জেনেছি। কিভাবে কি ঘটনা ঘটেছে তাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ৯৯৯-এ কল দেয়ায় কোন অফিসার বকাঝকা করার কথা যেহেতু উঠেছে তা খতিয়ে দেখে সত্যি পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, রামুসহ পুরো কক্সবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে গরু ডাকাতির ঘটনা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫দিন পূর্বে রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার নুরুল হকের বাড়িতেও ডাকাতদল হানা দিয়ে ৪টি গরু লুট করেছে। একই ভাবে পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, উখিয়া থেকেও একই ধরণের অভিযোগ আসছে প্রায়। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ