৬ নভেম্বর ২০২৫

সিএমপি কার্যালয়ে চট্টগ্রাম গণহত্যার প্রধান আসামির ছবি, ক্ষোভ আ.লীগ নেতাদের

জিয়াউল হক ইমন »

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস। ৩৫ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘি ময়দানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমাবেশে অতর্কিত গুলি বর্ষণ করে ২৪ জনকে হত্যা করে। মূলত আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই এই হামলা। ওই হামলার প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা।

জানা যায়, ২৪ জানুয়ারির সেই গণহত্যার নির্দেশদাতা মির্জা রকিবুল হুদা পুলিশের খাতায় আসামি হিসেবে নাম থাকলেও তার ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের ওয়েটিং রুমে। যদিও প্রধান আসামি হিসেবে রায়ের আগে তিনি শারীরিক নানা অসুস্থতাজনিত কারণে যুক্তরাস্ট্রের ফ্লোরিডায় মৃত্যু বরণ করেন।

এরপরও ২৪ জন মানুষকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে পুলিশের খাতায় যার নাম, তিনি কিভাবে সেই পুলিশ কার্যালয়ে বিভিন্ন কমিশনারের ছবির সাথে স্থান পান, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

সম্প্রতি বাংলাধারার এই প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, মির্জা রকিবুল ১৯৮৭ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ১৯৮৮ সালের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তারই সুবাধে শুরু থেকে বর্তমান কমিশনার পর্যন্ত ৩১ জন কমিশনারের মধ্যে তিনি ছিলেন ৭ নম্বরে। ধারাবাহিকভাবে সাবেক পুলিশ কমিশনার এ এফ কবিরের পরে এবং এম ওয়াহিদুল হকের আগে সিএমপির ওয়েটিং রুমে তার ছবি ঝুলছে।

প্রতিবেদন লেখার ওই সময় ওয়েটিং রুমে উপস্থিত থাকা চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ লোকমান বাংলাধারাকে বলেন, গণহত্যার নির্দেশদাতার ছবি পুলিশ কার্যালয়ে বেমানান। আসামির ছবি কার্যালয়ে টাঙ্গানো থাকলে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা জন্মাবে। এটা এখনই সরিয়ে নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বাংলাধারাকে বলেন, মির্জা রকিবুল হুদা একজন ঘৃণিত ব্যক্তির নাম। মার্শাল ’ল সরকারের অধিনে চাকরি করার সময় তার নির্দেশেই নিরীহ জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আমাদের অনেক বন্ধুকে হত্যা করেছে। মূলত আমাদের নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই এই হামলা। মৃত্যুবরণ করলেও সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি মনে করি, সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামির ছবি সরকারি দপ্তরে থাকা উচিত না।

সিএমপি কার্যালয়ে রকিবুল হুদার ছবি ঝুলানো থাকার বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাংলাধারাকে বলেন, মির্জা রকিবুল হুদা গণ হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মামলার ১ নম্বর আসামি। যদি সে জীবিত থাকতো তাহলে মৃত্যুদণ্ড হতো। মৃত্যুজনিত কারণে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ধরে নিতে হবে সমপর্যায়ের সব আসামির মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় তিনিও বেঁচে থাকলে মৃত্যুদণ্ডই পেতেন। সিএমপি কার্যালয়ে যদি তার ছবি লাগানো থাকেও তাহলে ২৪ শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম গণহত্যার প্রধান আসামি উল্লেখ থাকাও বাঞ্চনীয়।

এ বিষয়ে নিয়ে মানবাধিকার সংগঠক মো. নুরুল আলম বলেন, সাবেক কমিশনার হলেও গণহত্যার নির্দেশ দাতার ছবি দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ কার্যালয়ে এমন ছবি দেখে আমি বিব্রত।

২০২০ সালের ৩১ আগস্ট সিএমপি’র এই ওয়েটিং রুম আধুনিকীকরণের শুভ উদ্বোধন করেন পুলিশ তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান।

বিষয়টি জানতে চাইলে সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারিশ বাংলাধারাকে বলেন, এরকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মন্তব্য করবেন বলেও জানান এই উপ-পুলিশ কমিশনার।

উল্লেখ্য, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালী জোনের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মণ্ডল, কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন।

এদের মধ্যে তিন আসামি মারা গেছেন। ২০০০ সালের ৯ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ের আগে মৃত্যুবরণ করায় মির্জা রকিবুল হুদাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যদণ্ড দিয়েছে আদালত। যার মধ্যে ১ জন এখনও পলাতক, বাকিরা কারাগারে।

প্রসঙ্গত, ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ঘটনায় নিহতরা হলেন- মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথেলবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।

বাংলাধারা/এআই

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ