৯ নভেম্বর ২০২৫

মাত্র ৫ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে সিএনজি চালককে হত্যা!

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি »

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালাতে হলে প্রতিমাসে অটোরিকশা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আহাম্মদকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে চালক একরাম হোসেনকে (২০) খুন করা হয়। হত্যা মামলার সাড়ে চার মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকালে সীতাকুণ্ডের ইপসা গেটে আয়োজিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহাদাত হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনের আগে জড়িত আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ইপসা’র মালিকানাধীন পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করে পিবিআই।

হত্যাকান্ডে জড়িত আটক চার আসামিরা হলেন, সীতাকুণ্ডের পৌরসদরের পেশকার পাড়া এলাকার তাজুল ইসলামের পুত্র মো. জাহেদ হোসেন (২০), মধ্যম মহাদেবপুর (ভূঁইয়া বাড়ি) এলাকার মো. জাফরের পুত্র নূর আহাম্মদ (৪০), বাড়বকুণ্ডের মধ্যম মাহমুদাবাদ (তেলিপাড়া) এলাকার মৃত আজগর আলীর পুত্র মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সাকিব (২০) ও উত্তর মাহামুদাবাদ সমিজি মোল্লাবাড়ির মো. রুহুল আমিনের পুত্র মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে রানা (২৪)। তারাও পেশায় সিএনজি অটোরিশা চালক।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটায় পৌরসদরের ইপসা গেট এলাকায় দুবৃর্ত্তের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সিএনজি চালক একরাম। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এবং পথচারীরা আহত একরামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরদিন তার বড় ভাই নুরুল হুদা বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন বলেন,সিএনজি চালক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঠিক কোন তথ্য-উপাত্ত ছিল না। মামলা পরবর্তীতে পুলিশের পাশাপাশি ক্লু-লেস বিহীন এ হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করেন তিনি। তিনি বিশ্বস্ত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেন।

চলতি মাসের ২৫ জানুয়ারি তিনি থানা পুলিশের কাছ থেকে স্ব-উদ্যোগে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। সেদিন রাতে পিবিআই চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাজমুল হাসানের দিকনির্দেশনায় অভিযান চালিয়ে পৌরসভা এলাকা থেকে চার আসামিকে গ্রেফতার করেন। পরদিন তাদের চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলার পাশাপাশি চারজনের রিমাণ্ড আবেদন করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ খান শুনানি শেষে সাকিব ও রানার ৩ দিন এবং নুর আহাম্মদ ও জাহেদ হোসেনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিরা জানান, সিএনজি মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আহাম্মদের লাইনে সিএনজি চালানোর জন্য একরামের কাছে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু একরাম তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় নূর আহাম্মদ তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে একরামকে হত্যার পরিকল্পনায় সে তার সহযোগী তিন সিএনজি চালক মো. জাহেদ, সাকিব ও রানাকে নিয়ে পৌরসদর বাজারে গোপন বৈঠক করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে একরামকে অনুসরণ করেন। রাতে ইপসা গেটে একরামের সিএনজি পৌঁছালে আসামী নূর আহাম্মদ তার চালিত সিএনজি অটোরিক্সা চাপিয়ে দেন এবং একরামের সিএনজির গতিরোধ করেন। তারা একরামকে এলোপাতাড়ি মারধরের পাশাপাশি তার বুকে, তলপেটে, পিঠে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। এরপর আসামি নূর আহাম্মদ, রানা ও সাকিব পালিয়ে যায়। তবে পালানোর আগে লোকজন এগিয়ে এলে হত্যাকারী জাহেদ আহত একরামকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পাশাপাশি কারও সাথে যোগাযোগ না করতে আহত একরামের মুঠোফোন নিজ জিম্মায় নিয়ে যায়।

পিবিআই চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, রিমান্ডে থাকাকালে আসামিরা হত্যার সত্যতা স্বীকার করেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশাটি উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন