বাংলাধারা ডেস্ক »
সাধারণ শিক্ষায় জোর দেয়ায় কারিগরি শিক্ষা কম গুরুত্ব পাচ্ছে সেজন্য কারিগরি শিক্ষায় বহির্বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। দেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন, ডেলটা প্ল্যান (বদ্বীপ পরিকল্পনা) বাস্তবায়নে দেশে কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কর্মদক্ষ-প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে উচ্চ অর্থনীতির দেশ গড়তে দেশের কারিগরি শিক্ষার হার ১৪ শতাংশকে সাধারণ শিক্ষার হার ৮৬ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ৮৬ শতাংশ হতে হবে কারাগির শিক্ষা আর ১৪ শতাংশ হতে হবে সাধারণ শিক্ষা।
গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২য় ব্যাচের ১ম পর্বের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল করিম।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িস্থ মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শাহ এমদাদিয়া ভবন-২ এর ডিআইআরআই কনফারেন্স হলরুমে গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ড. মো. আবদুল করিম আরও বলেন, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়ার উন্নতির পেছনে রয়েছে এ কারিগরি শিক্ষা। জার্মানিতে ৭৩, জাপানে ৬৬, সিঙ্গাপুরে ৬৫, অস্ট্রেলিয়ায় ৬০, চীনে ৫৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ শতাংশ মানুষ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ। অথচ আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ১৪ শতাংশ, যা খুবই দুঃখজনক। ফলে বিদেশে গিয়ে এদেশের কর্মীদের কম বেতনে চাকরি করতে হচ্ছে। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি বিদেশে কাজ করে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ উপার্জন করছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও গার্মেন্ট শিল্পেও ভারতের লোকজন অ্যাডভাইজার হিসাবে উচ্চ বেতনে কাজ করছে। সেখানে আমাদের অদক্ষ শ্রমিকরা তাদের অধীনে চাকরি করছে খুবই কম বেতনে। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমি এ প্রতিষ্ঠানে যে-কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকব।
গাউসুল আজম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, দরবারের নায়েবে সাজ্জাদানশীন শাহজাদা সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে ও জিএএমপিআই অধ্যক্ষ মো. আবদুল বাতেনের সঞ্চানলায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অথিতি ছিলেন ফটিক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এটিএম কামরুল ইসলাম, নানুপুর লায়লা কবির ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মেজবাউল আলম ভুঁইয়া।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, জিএএমপিআই’র শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে- আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের দক্ষ এবং কারিগরি জনশক্তি গড়ে তোলা দরকার। আমি সায়েন্সের ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, কারিগরি শিক্ষার প্রসারটা খুবই কম হয়েছে। উন্নত দেশে যেমন ইউএসএ, জাপান, জার্মান, কানাডায় টেকনিক্যাল স্টুডেন্ট ৫০ শতাংশ। তারা উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পেরেছে এ কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রগামী করে। যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে তারা এগিয়ে গেছে, আমরা পারিনি। এ রকম একটা মহৎ উদ্যোগ মাইজভান্ডার দরবার শরীফের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে তা আসলে খুবই সময়োপযোগী।
সভাপতির বক্তব্যে শাহজাদা সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ কর্তৃক অনুমোদিত। আমরা এখানে ৬ মাসব্যাপী বেসিক ট্রেড কোর্স পরিচালনা করছি। আমাদের এখানে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, আবাসিক-অনাবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০০ শতাংশ ল্যাব সুবিধা, অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পরিচালনা, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইংলিশ স্পোকেন কোর্সের ব্যবস্থা ও অত্যাধিক বিজ্ঞান ল্যাবের সু-ব্যবস্থাসহ আরও অনেক সুবিধা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশাজাগানিয়া ব্যাপার হচ্ছে— কম্পিউটার, অফিস অ্যাপ্লিকেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশকিছু ছাত্রছাত্রী বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ক্যারিয়ার ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিং শিখে মার্কেটপ্লেসে সফলভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে। অনেকে ৫ স্টার রেটিংস-সহ পেমেন্ট নিশ্চিত করেছে।দরবারের ভেতরে এমন একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের নেপথ্যে সৈয়দ শাহছুফি এমদাদুল হক মাইজভান্ডারীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা দর্শনার্থী-জেয়ারকারী হিসেবে এ পবিত্র স্থানে আসেন তারা যেনো কারিগরি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। স্ব স্ব জেলা-উপজেলায় গিয়ে সবাইকে কারিগরি শিক্ষার অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। সু-খবর হচ্ছে, আমাদের ২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জনকে ৪ বছর মেয়াদে বৃত্তি দিচ্ছে (বাংলাদেশ রি-রোলিং কোম্পানি) বিএসআরএম। এখন আমাদের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৬২। এভাবে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে আমরা বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছি।
জিএএমপিআই অধ্যক্ষ মো. আবদুল বাতেন বলেন, উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে তারা শিক্ষায় যতটা উন্নত, তার চেয়ে বেশি উন্নত যুগোপযোগী শিক্ষায়, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায়। কিন্তু আমাদের দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। বলা হয় দক্ষজনশক্তি নেই অথচ দক্ষজনশক্তি গড়ার প্রতিষ্ঠানগুলো খালি পড়ে আছে। তবে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে নানামুখী কর্মসূচি নিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাদেরও এগিয়ে আসতে। অভিভাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ, নিঃসংকোচে আপনাদের সন্তানদের আমাদের প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিন, তাদের কর্মমূখী শিক্ষায় দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। এটা আধ্যাত্মিক জগতের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। আমাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
আরও উপস্থিত ছিলেন জিএএমপিআই’র চিফ ইনস্ট্রাক্টর (নন-টেক বিভাগ) রবিউল সুমন, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের চিপ ইনস্ট্রাক্টর মো. শহীদুল্লাহ, কম্পিউটার বিভাগের ইনস্ট্রাক্টক মো. মহিউদ্দীন, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ইনস্ট্রাক্টক মো. মুনতাসির উদ্দীন, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর মো. নাজিম উদ্দীন, ইনস্ট্রাক্টর (নন-টেক) হাবিবা ইয়াছিন, শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক শেখ মো. আজম প্রমুখ।