৯ নভেম্বর ২০২৫

ভালোবাসা দিবস ও ফাগুন উৎসবে প্রিয়জনকে নিয়ে সৈকতে পর্যটকদের ভিড়

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে)। এবারে এদিনেই পড়েছে পহেলা ফাগুন। বাঙ্গালিয়ানায় বিশ্বাসীরা ঋতুরাজ বসন্তকে বরণে পহেলা ফাল্গুন আয়োজন করেন ‘ফাগুন উৎসব’। ভালোবাসা ও ফাগুন উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন ছিলো কক্সবাজারে। সমুদ্রের সান্নিধ্যে প্রিয়জনকে ভ্যালেন্টাইন এবং ফাগুনের ভালোবাসা জানাতে সৈকতে ভীড় করে অগণিত পর্যটক ও স্থানীয় বিনোদন প্রেমীরা।

খ্রিস্টাব্দীয় সময়ে চলা ডিজিটালাইজ সময়ের অধিবাসী হিসেবে ভালোবাসা দিবসে মঙ্গলবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে নামে মানুষের ঢল। কেউ প্রিয়জন সঙ্গে নিয়ে, কেউ বাবা-মা আর কেউ প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে ছুটে এসেছেন ঢেউয়ের সান্নিধ্যে।

বালিয়াড়িতে বসে ফাগুন হাওয়ায় একটু আলাপন, ঢেউয়ের সাথে সমুদ্র স্নানে চলেছে ভালোবাসার মিতালী। পর্যটকের পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন স্থানীয়রাও।

ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরছেন পাহাড়-সমুদ্রের সেতু বন্ধনে মেরিনড্রাইভ সড়কসহ সৈকতের ডজনাধিক পয়েন্টে। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় ছিল প্রশাসনের সতর্কাবস্থা।

বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে সাগরের নীল জলরাশি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে কক্সবাজারে এসেছেন অসংখ্য পর্যটক। শহরের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর প্রায় অতিথিতে ভরা। পর্যটকরা সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, ইনানী পর্যটন পয়েন্ট ছাড়াও ভ্রমণ করেছেন দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, রামুর বৌদ্ধ বিহার, রেডিয়েন্ট ফিশ ওর্য়াল্ড, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। এতে সমুদ্র পাড় উৎসব স্থলে পরিণত হয়েছে।

ডিজিটাল যুগেও ফুরিয়ে যায়নি ভালোবাসা জানাতে ফুলের আবেদন। প্রিয়জনের জন্য ফুল কিনতে সকাল থেকে সারাদিন শহরের ফুলের দোকানে ভীড় জমায় শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ।

চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক মৌমিতা জাহাঙ্গীর জানান, শুরু হয়েছে বসন্ত। তার সাথে মিলেছে ভালোবাসা দিবস। সময়টা উপভোগ্য করতে নতুন স্বামীকে নিয়ে সৈকত শহরে হানিমুনে এসেছি। চারপাশে আনন্দ-প্রিয় মানুষে ভরপুর। দেখে পৃথিবীটা ভালই লাগছে।

ঢাকার শিক্ষার্থী আনিকা নিশাত জানান, বিশ্ব ভালবাসা দিবস সামনে নিয়ে সোমবার বন্ধুরা একসাথে মজা করতে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। কলাতলী হতে ইনানী সী-পার্ল পর্যন্ত কতটা নান্দনিক ও স্বর্গীয় তা এখানে না এলে বোঝা যেত না। পেছনে পাহাড় আর সামনে নীল জলরাশির বিস্তৃর্ণ সাগরের বুকে উপছে পড়া ঢেউ মূহুর্তেই মনে আনন্দ এনে দেয়।

এদিকে, দিবসে অন্যকোন হোটেলে আয়োজন না থাকলেও আলাদা ভাবে ফাগুন উৎসব আয়োজন করেছে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেড।

হোটেল পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে ঘিরে এগুচ্ছে কক্সবাজারের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প। তারকা হোটেল হিসেবে পর্যটকদের বিলাসী জীবনে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বাংলা বর্ষ বরণ নিয়ে হোটেল প্রাঙ্গণে আমরা তিনদিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলা করি। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবসের সাথে আমরা আয়োজন করেছি ঋতুরাজ বসন্ত বরণে ‘ফাগুন উৎসব’। উৎসবে পিঠা মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার প্যাকেজ। এতে অংশগ্রহণকারিদের নিয়ে হবে রেফল ড্র। বিজয়ীদের মাঝে ডায়মন্ড রিং, হোটেলে ফ্রি থাকাসহ নানা উপহার দেয়া হয়েছে। হোটেল গেস্টসহ সবার জন্য উন্মুক্ত পার্কিং এরিয়ার অনুষ্ঠান। ভালবাসা দিবসে আসা পর্যটকদের জন্য ‌’লাভ’ প্রতীকের টেটু করা হয়েছে। গড়া হয়েছে সেলফি জোন।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে ভালোবাসা দিবস পড়ায় রুমের ক্রাইসিস পড়েনি। ফলে ভোগান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি আগত পর্যটকদের।

ট্যুয়াক সভাপতি আনোয়ার মোস্তফা বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে সৈকতের লাবণী-সুগন্ধা-ডায়বেটিক পয়েন্ট, দরিয়া নগর, ইনানী, হিমছড়ির বালিয়াড়ি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে। শীতের শেষ সময়ে ভ্যালেন্টাইন ডে ও বসন্ত বরণে পর্যটক ও দর্শনার্থী আগমনে পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরা দারুন খুশি।

কক্সবাজার সী-সেইভ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মো. ওসমান বলেন, ভালবাসা দিবসে সৈকতে পর্যটক ও দর্শনার্থী বেড়েছে। গোসলে নামাদের নিরাপত্তায় আমরা সার্বক্ষনিক নজরাদি করেছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, এবারের ভ্যালেন্টাইন্স ডে ও ফাগুন উৎসবে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তাদের নিরাপত্তায় ২৪ ঘণ্টা বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে সৈকতসহ সকল পর্যটন স্পটে। তাছাড়া হোটেল-মোটেলের নিরাপত্তায় নিয়মিত টিম কাজ করছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ’র নেতৃত্বে সৈকতে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছে। বালিয়াড়ি ও পর্যটন এলাকায় সবার ভ্রমণ আনন্দিত করায় আমাদের মূল লক্ষ্য।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশেষ দিন বলে কথা নেই- যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি সার্বক্ষণিক রয়েছে। ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও, ভালবাসায় মগ্ন জুটিরা টেকনাফের মাথিনের কূপ এলাকায়ও বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভীড় করেছে বলে জেনেছি। অনেকে অমর প্রেমের স্বাক্ষি ধীরাজের প্রতিকৃতির সাথে নিজের ছবি তুলে দিনটিকে স্মৃতিময় করেছেন। থানা কম্পাউন্ডের মাথিন কূপ দেখতে আসাদের পুলিশের পক্ষে সাধুবাদ জানানো হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ