৬ নভেম্বর ২০২৫

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণার উৎস

সম্পাদকীয় »

বাঙালির মাতৃ ভাষা রক্ষায় ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। মহান ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্তি হলো এবার। ১৯৫২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ছাত্ররা মিছিল বের করলে তাদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে শহীদ হন সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিকসহ বেশ ক’জন ছাত্র-যুবক। অনেকে আহত হয়েছিলেন। ভাষাশহীদরা বুকের রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে। এই একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণার উৎস।

তাদের এ আত্মদানের মাধ্যমে পূর্ববাংলায় ভাষা ও জাতীয়তাভিত্তিক যে জাগরণের সূচনা হয় তাই ১৯৭১ সালে বাঙালিকে স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে এবং পাকিস্তানের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে বাঙালি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। একুশের চেতনা তাই অনির্বাণ, নিরন্তর এর চেতনা প্রবহমান আর তা দেশবাসীকে একটি উদার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতি অভিমুখি দেশ গড়ে তোলায় অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে।

আমাদের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করায় বিশ্বের সকল ভাষাভাষির কাছে এই দিবসটি নতুন মাত্রা ও মর্যাদার হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বিশ্বের সকল দেশের মাতৃভাষার প্রতি মর্যাদা প্রদান, সে সাথে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া ভাষা সংরক্ষণ এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষাগুলি বিকাশে সকল দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি আহবান জানায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

তবে এটি দুঃখজনক যে, ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পরও আমাদের দেশে শিক্ষা, ব্যবহারিকসহ জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষার প্রচলন, ব্যবহার, এর সমৃদ্ধি নিয়ে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠা করায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও সরকারি-বেসরকারি আমলাদের ইংরেজি প্রীতি সমর্থনযোগ্য নয়। তাছাড়া মাতৃভাষার অশুদ্ধ ব্যবহার, বিকৃত উচ্চারণ, ভুল প্রয়োগ, বিদেশি শব্দ ও আঞ্চলিক শব্দের ঢালাও ব্যবহার বাংলা প্রমিত রূপের সৌন্দর্যহানিও ঘটাচ্ছে।

আমাদের উচ্চ শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য অনুবাদ ও পরিভাষার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য রাষ্ট্রের ভাষা নীতিমালা ও অনুবাদ পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। বাংলা এখন পৃথিবীর পঞ্চম ভাষা। জাতিসংঘের অন্যতম দাফতরিক

ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করতে আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা আছে। দেশের সংখ্যালঘু, নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণে আমাদের যত্নবান হতে হবে। তারা যাতে নিজেদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে পারে সে ব্যাপারে প্রচেষ্টা নেয়া প্রয়োজন।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মানুষের মানবিক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের জন্য প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য ঘুচিয়ে, দুর্নীতির অবসান ঘটিয়ে সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সরকার ও দেশবাসীকে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাদের আত্মদান জাতিকে দেশপ্রেম ও মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগে উজ্জীবিত করুক।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ