তানভীর হাসান বিপ্লব »
আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবন যাত্রার মান, শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক সূচক বা অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষেন মন মানসিকতারও উন্নয়ন হয়েছে। মেয়েদেকে এগিয়ে যেতে এখন আর অতো বেশি বাধাগ্রস্ত হতে হয় না, বা অন্য কারও কথাও শুনতে হয় না।
অথচ আশির দশকের কথা যদি একটু চিন্তা করি, মেয়েরা বাইরে যাওয়ার কথা চিন্তা করলেই নানান কথা মেয়েদেরকে শুনতে হতো।
একজন মেয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন তার নিজ পরিবারের সাপোর্ট। তবে একজন নারীর এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টা একটি পুরুষের মতো অতোটা সাবলিল নয়। মাতৃত্ব, সন্তান, সংসার এবং পরিবার-এই বিষয়গুলোর সাথে একজন নারী অতোপ্রতোভাবে জড়িত। এসবের জন্য একজন নারীকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়।
তাই একজন নারী চাইলেই এসব ভুলে বা ছেড়ে থাকতে পারে না। প্রকৃতি একজন নারীকে এভাবেই তৈরি করেছে। একজন নারীর একটি বিশেষ দিক হল সে চাইলে সকল দিক একা হাতে গুছিয়ে সবকিছু সামলিয়ে যে কোন অসাধ্যও সাধন করতে পারে।
কখনো কখনো কোনো কোনো নারীরা অনেক শক্ত চ্যালেঞ্জ ও গ্রহণ করে। একজন নারীর সফলকাম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সে যে কাজটিই করে সেটি অনেক মনোযোগ দিয়ে করে। আর যে করে সেই সফল হতে পারে।
আজকে আমাদের দেশে যেসব নারীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে এগিয়েছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদেরকে অনেক কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগুতে হয়েছে। তাদের কারোরই চলার পথ অতো সহজ ছিল না। তবে যেসব নারীরা তথাকথিত সব বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যায় দিনশেষে তারাই সফল হয়। যেমন আজকের নারী।
বেগম রোকেয়া এবং তার উত্তরসূরী ফয়জুননেছা, জোবেদা খাতুন, সুফিয়া কামাল ওনাদের জীবন কাহিনী জানলে নারী জাগরণের সঠিক চিত্র পাওয়া যায়। তাঁরা নারী শিক্ষা, নারী অধিকারের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ভিত রচনা করেছেন। তাইতো ইতিহাসে তাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে আজীবন লেখা থাকবে।
নারীদের এগিয়ে যেতে হবে প্রথমত নিজের জন্য। নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তার মাতৃত্ব, সন্তান, সংসারকে নিজের তাগিদে বাচিঁয়ে রাখার জন্য। এসবের একান্ত দাবীদার মুলত একজন নারী কারন এগুলোর মুল কারিগরই হচ্ছে নারী। এটা নারীর আবেগের জায়গা। নিজস্ব সম্পত্তি। এগুলো একজন নারীকে পরিপূর্ণ করে।
পুরুষরা এসবের অংশীদার হলেও এগুলো লালন করে একজন নারী। তাই নারীদেরকে এমন অবস্থানে যেতে হবে যেন পুরুষরা চাইলেই তাকে অবজ্ঞা করতে না পারে। কোন ধরনের হুমকি, ভয় দেখাতে না পারে। আমাদের দেশে অনেক নারীরা এখনো মুখ বুজে অনেক কিছু মেনে নেয়।
অত্যাচার সহ্য করে। তাদের অন্তর আত্মার আর্জি মুখ ফুটে বলতেও পারে না। এখান থেকে নারীদেরকে বেরিয়ে আসতেই হবে। তবে নারী স্বাধীনতার নামে বা নারী অধিকারের নামে এমন কিছু করা যাবে না যেগুলো নারীদের আত্মসম্মানকে পদদলিত করে।
আমাদের দেশে নারীরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় খুবই ভালো করছে। রাজনীতিতে নারীরা বেশ এগিয়েছে। তবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়লেও নারী নেতৃত্ব এখনো অপ্রতুল। কর্মক্ষেত্রে সফল নারীর সংখ্যা আশাব্যাঞ্জক নয়। তবে নারী উদ্যোক্তা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফলতা নিয়ে অনেক নারী অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্মে খুবই ভালো করছে। নারীরা এখন বুঝে গেছে নিজের পায়ের মাটি শক্ত করা কতটা জরুরী। গ্রামেগঞ্জে নারীরা সাবলম্বী হওয়া শুরু করেছে। নারীরা এখন চারদেয়ালে বন্দি কোন শোপিস নয় বা কবি লেখকের রসালো কবিতা বা উপন্যাসের মুল উপজীব্য নয়।
নারীদেরকে প্রকাশ্যে কেউ হেয়প্রতিপন্ন করতে এখন অন্তত চিন্তা করতে হয়। তবে সুযোগ পেলে নারীদের উপর তথাকথিত পুরুষরা বল প্রয়োগ করতে চায় তাই নারীদের উচিত কখনোই পুরুষকে সেই সুযোগ না দেয়া। নিজেকে অসহায় না ভাবা। সবর্দা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলা।
নারী দিবস উপলক্ষে আজ সিআরবি-তে ইয়ামাহা এর আয়োজনে রোডবুক বিডি থেকে র্যালি বের করা হয় সকাল ৮ টায়। প্রায় অর্ধ শতাধিক নারী রাইডার অংশগ্রহণ করে এই র্যালিতে।
লেখক : কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
