হাসান সৈকত »
কাঁচাবাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। মধ্যবিত্ত ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে নিম্নবিত্তরা বলছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে!
বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমলেও দেশের বাজারের চিত্র উল্টো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারের সাথে সমন্বয় করে যে দাম বাড়ানো হয়েছিল, তা এখনও তেমনি রয়েছে। উল্টো কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা অব্যাহত। আসন্ন রমজানে চাহিদা আরও বাড়বে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রায় এক হাজার ৯০০ ডলার। এখন তা এক হাজার ৩৫২ ডলারে নেমেছে। পাম অয়েলের দাম এক হাজার ৬৩৪ ডলার থেকে কমে হয়েছে ৯৪২ ডলার। একই সময়ের ব্যবধানে প্রতি টন গমের দাম ৪৯২ ডলার থেকে কমে ৩৮০ ডলার হয়েছে। এভাবে চিনি, গুঁড়া দুধ, ডাল ও ছোলার দামে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এবার দেখা যাক বাংলাদেশের অবস্থা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত বছর রোজার আগে একই সময়ের তুলনায় বর্তমানে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৫৬-৬৪ শতাংশ, ময়দা ৩৮-৪০ শতাংশ, চিনি ৪৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৮ শতাংশ, পাম তেল ১৮ শতাংশ, ছোলা ২০ শতাংশ এবং মসুর ডাল ১২ শতাংশ।
এদিকে, এসব নিত্যপণ্যের পাশাপাশি মাছ এবং সব ধরনের মাংসের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব মতে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বাজার যেমন, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার, কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজার ও বহদ্দারহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছ ও মাংস ছাড়াও নিত্যপণ্যের দাম শুনে গায়ে জ্বালা ধরার অবস্থা!
গত জানুয়ারিতেই নগরীর এসব বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ১৪০-১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে সেই মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। একই সাথে বেড়েছে সোনালী মুরগি, ডিম, খাসি ও গরুর মাংসের দামও।
বর্তমান বাজারে সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০- ৩৮০ টাকায়, যার একমাস আগের মূল্য ছিল মাত্র ২৭০-২৮০ টাকা। এছাড়াও দেশি মুরগি ছিল ৪৫০-৫৫০ টাকায়, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০-৫৮০ টাকা। যেই ঘিলা ও কলিজা মানুষ কিনে খেত পানির দামে, সেটিরও দাম ১৫০ টাকা। মুরগির ডিম গত মাসে ডজন প্রতি বিক্রি হয়েছিল ১২০-১২৫ টাকায়, যা এখন ১৪০-১৫০ টাকা।
মাছ বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে কেজিপ্রতি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা , কাতলা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ৩০০ টাকা এবং রুই ১৮০ থেকে ২৬০ টাকায়।
গত মাসেই গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৫০-৭০০ টাকা, তা এখন বেড়ে ৭৫০- ৮৫০ টাকা। খাসি ছিল ৯০০-১০০০ টাকা, কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।
নিম্ন মধ্যবিত্য পরিবারের সাধ্যের মধ্যে থাকা উন্নত ও ভালো খাবারের একমাত্র ভরসা বয়লার মুরগী ও লাল ডিম। বর্তমানে সেটিও কিনতে হিমসিম খাচ্ছে বলে জানান বাজারে মাংস কিনতে আসা একাধিক ক্রেতা।
খুচর ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বড় বড় খামারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বেশি দামে কিনে আবার বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
এই ব্যপারে খামারি ও পাইকারি বিক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা দাবি করেন, সরবরাহ সংকট ও পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। আর এ কারণেই কিছুটা বাড়তি দামেই বাজারে পণ্য ছাড়তে হচ্ছে।
এদিকে কিছু খামারিদের সাথে কথা হলে জানা যায়, আগের তুলনায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের অনেকেই মুরগির শেডে বাচ্চা তুলেননি। ফলে দেখা দিচ্ছে অতিরিক্ত সরবরাহ সংকট।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সরবরাহ সংকট না থাকলেও এই ব্যাপারে যেন অযুহাতের শেষ নেই খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছেও।
নিত্যপণ্যের বাজার করতে আসা কামাল হোসেন বাংলাধারাকে বলেন, দাম বাড়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরওকঠোর ভাবে নজরদারি করা উচিত। এভাবে দ্রব্যমূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকলে দৈনন্দিন জীবন কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি। আবার কোনো কোনো ক্রেতার দাবি, দাম বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ সিন্ডিকেটের কারসাজি।
বাংলাধারা/এআই












