২৪ অক্টোবর ২০২৫

নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই চলছে সিডিএ’র কাজ, গর্তে পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে কিশোর

অনিক আখন্দ »

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কার্যক্রমে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা না করার অভিযোগ বেশ পুরনো। ইতোমধ্যে এসব অনিয়মের চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অজানা কারণে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। যার ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি আর মৃত্যুঝুঁকির মাশুল দিচ্ছে সাধারণ জনগণ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঠিকাদারের এই অবহেলার শিকার হলেন ইমরান কায়েস চৌধুরী নামে এক কিশোর। এদিন রাত ৮টার দিকে টিউশনের ক্লাস থেকে ফেরার পথে লালখান বাজার সড়কে যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াপ্রজেক্ট এলাকায় মাটির গর্তে পড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এই কিশোর।

নগরীর লালখানবাজার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর সম্মুখে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ড্রেন নির্মাণ কাজ। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের চলাচলের রাস্তা নির্বিঘ্ন করতে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দীর্ঘ সময় জ্যামে আটকা পড়ে কারণ জানতে গাড়ি থেকে নামে ইশরাক ইমরান, তবে অরক্ষিত প্রজেক্ট এবং অন্ধকারাচ্ছ্বন্ন এলাকা দিয়ে দু’কদম যেতেই হোচট খেয়ে পড়ে যান অরক্ষিত লোহার রডের উপর। যা কিনা সরাসরি কোমড়ে কিছুটা উপরে ঢুকে ক্ষতবিক্ষত হয় তার পেটের ভিতরের বেশ  কিছু অংশ। পথচারীদের সহায়তায় লোহার রডের সেই টুকরো বের করতে পারলেও   রক্তাক্ত শরীর হয়ে পড়ে নিস্তেজ। পরবর্তীতে তার গাড়ি ড্রাইভার ও এক মোটরসাইকেল আরোহীর সহায়তায় মা ও শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. সৈকত জানান, ‘রোগীর ইঞ্জুরির ধরণ মেজর। এসকল ক্ষেত্রে রড চামড়ার ভেতরে থাকা টিস্যু ও কোষের পাশাপাশি কিডনিসহ মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্তের কারণে আহত ব্যক্তির জীবনকে সংকটাপন্ন করে তোলেছে।’

পরবর্তীতে আহত কায়েসকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরে চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রপাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

চিটাগাং গ্রামার স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী আহত ইমরান বর্তমানে ও-লেভেলে পড়াশোনা করছেন। তার বয়স ১৭ বছর। তার পিতা ফজলে চৌধুরী আরমান।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘গাড়ি থেকে নেমেই প্রজেক্ট এলাকার ভেতরের  উঁচুনিচু মাটির গর্তে পা দিয়ে সামনের দিকে পড়ে যান ইমরান কায়েস। সেখানে থাকা অরক্ষিত লোহার রড ঢুকে যায় তার পেটে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদার কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এক সপ্তাহের ভিতর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তুলে ফেলা হয় স্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী।’ এসময় তিনি এড়িয়ে যান লাইটের ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি।

ঠিকদারের এই অব্যবস্থাপনার বিষয়টি জানার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি জানান, দ্রুত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। ফেন্সিং ছিল বলেই জানতাম, ঠিকাদারী গাফিলতি থাকলে  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ করছে ম্যাক্স র‍্যাংকন গ্রুপ।

আরও পড়ুন