৫ নভেম্বর ২০২৫

রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হলে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের অফিস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে অযাচিতভাবে সাধারণ জনগনকে কষ্ট দেয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের অফিস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

শুক্রবার (১০ মার্চ) সকালে উত্তর কাট্টলীস্থ নিজ বাসভবনে ‘নাগরিক উদ্যোগ’র এক জরুরি সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি জানান।

এ সময় খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এ মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। মূলত রমজান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসলেও দ্রব্যমূল্যের কর্পোরেট সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতার কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রমজান বাধাগ্রস্ত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বৈশ্বিক মন্দা এবং ডলার সংকটের অজুহাতে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন সাধারণ জনগণ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে প্রতিটি পরিবার আর্থিকভাবে চাপে পড়বেন। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কর্পোরেট সন্ত্রাসীদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান নাগরিক উদ্যোগ’র প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে কারা চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন? কারা চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ খালাস না করে কৃত্রিমভাবে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে? এভাবে বছরের পর বছর বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে কর্পোরেট সন্ত্রাসীরা। এসব কর্পোরেট সিন্ডিকেটরা ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এখন ব্রয়লার মুরগির দামও নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব সিন্ডিকেটের হাতে দেশের ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা ইচ্ছেমতো মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ করছে, খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে, ফলত প্রান্তিক খামারিরা এখন আর পোল্ট্রি ব্যবসা করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে করে একদিকে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্যদিকে ভোক্তাগণ অতিরিক্ত দামে মাংসের প্রোটিন গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরো বাজারই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সুজন বলেন, বর্তমানে ডলার সংকটের মাঝেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় রমজানে চাহিদা মাফিক ভোগ্যপণ্যের আমদানির জন্য সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলারের যোগান দিয়েছে। সে মোতাবেক ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত সংখ্যক ভোগ্যপণ্য বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা এবং খেজুর আমদানি করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারপরও ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার সাথে বরখেলাপ বলে আমরা মনে করি। তারপরও যদি এসব কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে অযাচিতভাবে সাধারণ জনগনকে কষ্ট দেয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে এসব কর্পোরেট অফিস ঘেরাও করারও হুমকি দেন তিনি।

তিনি জনগণকে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঐক্যমত্য গঠন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেকোন অজুহাতে এসব সিন্ডিকেটরা একজোট হয়ে জনগনের উপর চড়াও হয়, তাহলে আমরা ভোক্তারা কেন এক হতে পারবো না।

তিনি আসন্ন রমজানে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লালকার্ড দেখার আহ্বান জানিয়ে দুই দিনের বেশি ইফতারিতে ব্যবহার্য পণ্য না কেনার জন্য জনগণের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান। এভাবে এক সপ্তাহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখলে জনগণই জয়ী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সুজন।

তিনি আগামী পুরো রমজান মাসে জনগণের সাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিভিন্ন হাট-বাজার, সুপার শপসহ শপিংমলে গণপ্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া রমজানে ব্যবহৃত নুডুলস, সেমাইসহ অন্যান্য ভেজাল খাদ্যপণ্য উৎপাদন, পরিবেশন এবং বিপণনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, র্যাব এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি অনুরোধ জানান সুজন।

রমজানে কোন অবস্থাতেই নাগরিক সুবিধা যেন বিপন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবাসংস্থার প্রতি অনুরোধ জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক এই প্রশাসক।

নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ এবং সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, ছালেহ আহমদ জঙ্গী, নুরুল কবির, মোরশেদ আলম, এহতেশামুল হক রাসেল, মো. শাহজাহান, শেখ মামুনুর রশীদ, রকিবুল আলম সাজ্জী, জাহাঙ্গীর আলম, ইজ্ঞিনিয়ার মিজানুর রহমান জনি, মনিরুল হক মুন্না, শাহনেওয়াজ আশরাফী, হিমেল মজুমদার, ফরহাদ বিন জামাল শুভ ও ফয়সাল ওয়াসি প্রমুখ।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ