৫ নভেম্বর ২০২৫

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফকে অভিনন্দন জানালেন প্যানেল মেয়র লিটন

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য পদে মনোনয়ন পাওয়ায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্যানেল মেয়র-১, ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং রামপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ‍যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সবুর লিটন।

রোববার (১৯) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিজের ফেসবুক পেইজে ছবিসহ স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি অভিনন্দন জানান। আবদুস সবুর লিটন লিখেন, ‘অভিনন্দন। ইন্জি. মোশাররফ হোসেন এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের নব নির্বাচিত সদস্য।’

এর আগে গতকাল রোববার (১৯ মার্চ) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য পদে মনোনয়নের তথ্যটি জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য পদে মনোনয়ন প্রদান করেছেন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের প্রার্থী ঠিক করে।

স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হওয়ায় প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি আশা করছি, চট্টগ্রামে অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাঁর সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।’

লিটন আরও বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য পদে মনোনয়ন দেওয়ায় চট্টগ্রামবাসী গর্বিত ও গৌরবের বিষয়। তিনি রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের সুসময় ও দুঃসময় দলের প্রতি আনুগত্য রেখে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রদেশিক পরিষদের একবার ও ছয়বার জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তিনি জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত ছিলেন।’

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১৯৪৩ সালের ১২ জানুয়ারি মীরসরাই উপজেলার ধুম ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম এস রহমান তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। মা পাঞ্জেবুনেছা। পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ১৯৬৬ সালে তিনি লাহোর থেকে খনিজ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

সাহসিকতার জন্য লাহোরে বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় মোশাররফ ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেখানে পড়াশোনাকালে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফার ডাক দিলে লাহোরে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রদের নিয়ে মোশাররফ হোসেন ছয় দফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে কক্সবাজারে হোটেল সায়মনের লনে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ক্যান্ডেললাইট নৈশভোজের আয়োজন করেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

বঙ্গবন্ধুপ্রেমী মোশাররফ চট্টগ্রামের তৎকালীন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজের পরামর্শে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে মীরসরাই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ১ মার্চ দুপুরে ৩ মার্চের জন্য প্রস্তাবিত গণপরিষদ অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করলে সারা বাংলা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বদেশ মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। যুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি গেরিলাযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ১৭ মার্চ জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পাকিস্তানি সেনাদের রসদ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা হিসেবে শুভপুর ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনাটা বঙ্গবন্ধুকে জানান। বঙ্গবন্ধু খুশিতে বুকে জড়িয়ে বলেন ‘সাবাশ’।

যুদ্ধকালীন ২৫ মার্চ ব্রিগেড পাকিস্তানি সৈন্য চট্টগ্রাম অভিমুখে রওনা দেয়। এ খবর জানতে পেরে তৎকালীন এমপিএ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার সাথিদের নিয়ে মীরসরাই শুভপুর ব্রিজের কাঠের অংশে অগ্নিসংযোগ করেন। ফলে পাকিস্তানি সৈন্যবাহী ২৬টি সাঁজোয়া যান চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করতে বেশ কালক্ষেপণ হয়। এরপর তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই থানার পাশে অবস্থিত অচি মিয়ার ব্রিজ ধ্বংসের নেতৃত্ব দেন। এরপর ধ্বংস করে দেন হিঙ্গুলি ব্রিজ। পরে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অপারেশনের জন্য পরিকল্পনা করেন এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল মন্থর করে দিতে সহযোদ্ধাদের নিয়ে বাড়বকুণ্ড কেমিক্যাল কমপ্লেক্স ব্রিজ উড়িয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ৮ ডিসেম্বর মীরসরাই হানাদারমুক্ত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বপরূপ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের এবং ১৯৯৬ সালে অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন, পর্যটন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮০, ২০০৪ ও ২০১২ সালে সভাপতি এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ