আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
বান্দরবানে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। এখানে নামে বেনামে পাহাড় কাটার ঘটনা প্রত্যেক দিনের। যার কারণে হুমকির মুখে পরিবেশ, ধ্বসে পড়ছে পাহাড়ও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান পৌর এলাকার রোয়াংছড়ি বাস স্টেশন সংলগ্ন বান্দরবান বৌদ্ধ আনাথালয়ের ছাত্রাবাসের পাশে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়। রাতে কিংবা দিনে পাহাড় কেটে সাবাড় করছেন পাহাড় খেকো মো. ইয়াছিন নামে এক ব্যক্তি। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কন্ট্রাক্ট নিয়ে পাহাড় কাটাই তার পেশা। তার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর কাছে একাধিক বার মামলা ও জেল খেটেও এটি যেন তার কাছে তুচ্ছ ঘটনা।
আরও জানা যায়, ইয়াছিনের বাড়ি কালাঘাটা নোয়াপাড়া গ্রাম। দুই ভাই, তাদের মধ্যে তিনি ছোট। বিগত ২০১০ সাল থেকে পাহাড় কাটায় নাম লিখেন। সেটি পর থেকে কন্ট্রাকে শুরু হয় পাহাড় কাটা। স্থানীয়রা নাম দেন পাহাড় খেকো মো. ইয়াছিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান বৌদ্ধ আনাথালয়ের ছাত্রাবাসে ভিতরে উন্নত মানের স্কেভেটর সাহায্যে চলছে বিশাল পাহাড় কাটা। ইতোমধ্যে প্রায় দৈর্ঘ্য ৩০০ ফুট, উচ্চতায় ৮০ ফুট ও প্রস্থে ৪০ ফুট পাহাড় কেটে অন্যত্রে মাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিগত ১৫ দিন ধরে স্কেভেটর সাহায্যে রাত্রিকালীন চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। আবার সেই মাটি বিক্রি জন্য ব্যবহার করা হয়েছে তিন থেকে চারটি ট্রাক ডাম্পার এবং অন্যজনের কাছে বিক্রি করছে বালাঘাটা এক ডিপোতে। এদিকে পাহাড় কাটার কারণে ওই সড়কের যাতায়াতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
পরিবেশ অধিদপ্তর তথ্যনুযায়ী, গেল বছরে কালাঘাটা বীর বাহাদুর নগরে রাত্রীকালীন বিশাল পাহাড় কেটে জরিমানা গুনেন মো. ইয়াছিন। এরপর থেকে রেইছা, গোয়ালিয়া খোলাসহ বিভিন্ন স্থানে স্কেটেভেটর সাহায্যে মাটি কাটেন লুকোচুরি করে। কিন্তু সেখানে বিক্রি করেন বিভিন্ন গণমান্য ব্যক্তির নামে।
স্থানীরা জানান, অনাথালয়ের ভিতরে রাত নামলেই মাটি কাটা চলে। যার কারণে আশেপাশে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া মাটির কাটার কারণে সড়কের অবস্থা ধুলোতে পরিণত হয়েছে। হাল্কা বৃষ্টি পড়লে সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে মো. ইয়াছিনের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরে কল যায়নি।
বান্দরবান বৌদ্ধ অনাথালয়ের অধ্যক্ষ তিক্ষিংন্দ্র মহাথেরো বলেন, মাটি ব্যাবসায়ী মো. ইয়াছিন কোনরুপ টাকা ছাড়াই মাটি কেটে দিচ্ছেন। তবে তার স্কেভেটর ও ডাম্পার (মিনি ট্রাক) খরচ বহন করার জন্য মাটিগুলো অন্যত্র বিক্রি করছেন। তাছাড়া অনাথালয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার জন্য সড়ক নির্মাণের কাজে মাটি ব্যাবসায়ী ইয়াছিনের মাধ্যমে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে।
পাহাড় কটতে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ জানান, পৌরসভা থেকে সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছলেন জনৈক জনপ্রতিনিধি। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ কাজকে সহজ করে দিতে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন চৌধুরী জানান, পাহাড় কাটার ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হয়েছে। এই বিষয়ে অধ্যক্ষ ও ইয়াছিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অপরাধে আনফোর্সমেন্ট মামলা দায়ের করা হবে।













