দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী »
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সোনালি ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। কোথাও পাকা, কোথাও আধা-পাকা ধান দোল খাচ্ছে মাঠে। চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলনে হাসিতে ভরে উঠেছে কৃষকের মন। যদিও ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতের শঙ্কায় ধান কাটা নিয়ে দুচিন্তায় রয়েছেন তারা। কষ্টের ফসল বাঁচাতে দ্রুত ধান কেটে বাড়ি তোলার জন্য তাড়াহুড়া করছেন। কিন্তু দ্বিগুণ মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। এতে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮২৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি ধান ২৮, ২৯, ৪৭, ৬৭, ৮১, ৮৯, ৯২, ৯৬ এবং ব্রি ধান ১০০ ( বঙ্গবন্ধু ধান) চাষ করা হয়েছে। প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে ২০টি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। হেক্টর প্রতি শুকনো ৫.৫ মে. টন ফলন আশা করা যাচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ, আমুচিয়া, করলডেঙ্গা ও সারোয়াতলি ইউনিয়নে সীমিত আকারে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পৌরসভাসহ অন্যান্য এলাকায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ।
তিনি বলেন, ধান এখন পরিপক্ক হয়ে গেছে। বৃষ্টি বড় ক্ষতি করবে না। তবে ভারী বৃষ্টি বা শিলাবৃষ্টি হলে ক্ষতি হবে। ঝড়ের আশঙ্কা থাকায় ক্ষেতের ধান ৮০% পেকে গেলে কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কাটার পর ধান জমিতে ফেলে না রেখে কৃষকের বাড়িতে নিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরূপ বোরো ফসল ঘরে তোলা যাবে বলে মনে করছেন এ কর্মকর্তা।
শ্রমিক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে শ্রমিক আসে নেত্রকোনা, সিলেট ও ভোলা থেকে। আশা করি শ্রমিক সংকট থাকবে না।

উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের কৃষক আবদুল জলিল জানান, এবার ২০ একর জমিতে ব্রি-৯৬ ও বঙ্গবন্ধু ১০০ ধানের চাষ করেছেন তিনি। দুই-তৃতীয়াংশ জমির ধান পেকে গেছে। এক সপ্তাহ পর থেকে ধান কাটা শুরু করতে হবে।
বোয়ালখালীর শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কৃষক আহম্মদ মিয়া বলেন, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে এখন আশঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে আগাম ভারী বৃষ্টিপাত। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ভারী বর্ষণ ও বৈরী আবহাওয়া থাকে। কয়েক বছর ধরে তা চলে আসছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে।অন্য জেলা থেকে শ্রমিক এনে ধান কাটা হয়। এবার শ্রমিকেরা আসছেন না। খুব বিপদে পড়ে গেছি। ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও গোলায় তোলা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি’। আল্লাহ সহায় থাকলে এবার ভালো ফলন পাবো। একই কথা জানান জৈষ্টপুরা গ্রামের কৃষক মো ইছাক, নুরুল আমিন ও উত্তর আমুচিয়া গ্রামের কৃষক অমিয় বড়ুয়া ও মাদল দে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল আলম জানান, প্রতি বছর এ সময়ে কম-বেশি দুর্যোগ থাকে। ভারী বৃষ্টিপাত-শিলাবৃষ্টি, ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। কৃষক ঝড়-বৃষ্টি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই মাসখানেকের মধ্যেই কৃষকদের ঘরে উঠবে বোরো ধান। এ ব্যপারে পরামর্শ দিতে মাঠে রয়েছি।













