৬ নভেম্বর ২০২৫

এশিয়ায় দুই তৃতীয়াংশ আবাসস্থল হারিয়েছে হাতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক »

এশিয়ায় আবাসস্থলের দুই তৃতীয়াংশই হারিয়েছে হাতি। শত বছরের বন উজাড় এবং কৃষি অবকাঠামোর জন্য মানুষের জমি ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে হাতির আবাসস্থল কমেছে। এশীয় হাতি বিপন্ন তালিকাভুক্ত। এশিয়া মহাদেশের ১৩টি দেশে এই হাতি পাওয়া যায়। বিশাল এই মহাদেশে এশীয় হাতির আবাসস্থল গত ৩০০ বছরে ৩৩ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৬৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জীব ও সংরক্ষণ বিজ্ঞানী শেরমিন ডি সিলভার নেতৃত্বে গবেষণাটি হয়। খবর সারাবাংলা’র।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, হাতির বাসস্থানের সবচেয়ে বড় হ্রাস ঘটেছে চীনে। দেশটিতে ১৭০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হাতির আবাসস্থল হ্রাস পেয়েছে ৯৪ শতাংশ। এর পরেই ভারতের অবস্থান। ভারতে গত ৩০০ বছরে হাতির আবাসস্থল কমেছে ৮৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় অর্ধেকের বেশি হাতির উপযুক্ত আবাসস্থল হারিয়ে গেছে। ভুটান, নেপাল এবং শ্রীলংকায়ও হাতির আবাসস্থলের উল্লেখযোগ্য কমেছে।

গত ৩০০ বছরে এশিয়ায় হাতির আবাসস্থল হ্রাসের অন্যতম বড় কারণ ঔপনিবেশিকতা। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, ১৭০০ সাল থেকে হাতির আবাসস্থল হ্রাসের গতি তীব্র হয়। ঠিক একইসময় এই অঞ্চলে ইউরোপীয় উপনিবেশের সম্প্রসারণও শুরু হয়। এই সময়ে, গাছ কাটা, রাস্তা নির্মাণ, খনিজ সম্পদ উত্তোলন এবং বন উজাড়ের কাজ বেড়ে যায়। বাড়ে জমিতে কৃষিকাজ।

গবেষণায় বলা হয়, এই সময়ে নতুন মূল্যবোধ ব্যবস্থা, বাজার শক্তি এবং শাসন নীতি ইউরোপের শহর ছাড়িয়ে এশিয়ার বনে এসে পৌঁছায়। এতে হাতির আবাসস্থল হ্রাস এবং প্রজাতির বিভক্তিকরণ ত্বরান্বিত হয়।

গবেষণায় বলা হয়, ১৭০০ সালে একটি হাতি বিচরণযোগ্য অঞ্চলের আনুমানিক ৪৫ শতাংশ এলাকা কোনো বাঁধা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারত। কিন্তু ২০১৫ সালে এই জায়গার পরিমাণ কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশে।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি হাতির বসবাস ভারত ও শ্রীলংকায়। দু’টি দেশেই ঔপনিবেশিক যুগে নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। কৃষিজমি বেড়েছে। শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়ায় বনভূমি আবাদ হয়েছে, তাতে মানুষের আবাস তৈরি হয়েছে। এতে মানুষের সঙ্গে হাতির দ্বন্দ্ব বেড়েছে।

যেমন, ভারতের আসাম রাজ্যে ১৯৮০ দশকের পর বন কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এই সময় থেকে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্বের ঘটনাও নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। হাতি-মানুষের দ্বন্দ্বে বড় নিয়ামক হয়েছে সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুও। যেমন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকটের সময় বাংলাদেশের কক্সবাজারে ১০ লাখের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নেয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী শিবিরটি এমন জায়গায় অবস্থিত যেখানে একসময় হাতির আবাসস্থল ছিল।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ