নিজস্ব প্রতিবেদক »
চাল, মরিচ ও পেঁয়াজের পর বাজারে এখন অস্থিরতার নাম চিনি। আগে প্রতি কেজি চিনির সরকার নির্ধারিত দাম ছিল ১০৭ টাকা, যা বাজারে পাওয়া যেতো ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।
তবে গত ৬ এপ্রিল সরকার খোলা চিনির দাম ৩ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করে ১০৪ টাকা। সরকারি নির্দেশনায় ১০৪ টাকায় চিনি বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে মিলছে না ন্যায্য মূল্যের চিনি। তবে দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই আরও বেড়ে গেছে চিনির দাম। এদিকে ভোক্তাদের দাবি বাজারে কৃত্রিম সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে বাড়ানো হয়েছে চিনির দাম।
নির্ধারিত মূল্য ১০৪ টাকা করা হলেও সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কেজিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে চিনির মূল্য ২৬ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেয়া হচ্ছে -এমন অভিযোগ ভোক্তাদের। ফলে দাম চলে যাচ্ছে ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। আর চিনির এমন বাড়তি দামের ফলে গত কয়েক মাস ধরে অস্থিরতায় ভুগছে চিনির বাজার। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না চিনির এমন লাগামহীন দাম।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেকটাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের। নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে চিনির দাম অনেকটাই বাড়তি। সরকার নির্ধারিত মূল্য ঠিক করে দিলেও আমার নিজেরাই কিনছি এখন অনেকটাই বেশি দাম দিয়ে।
এ অবস্থায় কেউই দায়ভার নিজের ঘাড়ে নিতে প্রস্তুত নয়। একএকজনের ইশারা এক-এক দিকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে আমদানিকারকরা। প্রতি কেজি চিনি ডিলার পয়েন্ট থেকে কিনতে হচ্ছে ১২৮-১৩০ টাকায়। ফলে বেশি দামে চিনি কেনায় বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এদিকে ডিলারদের অভিযোগ মিল মালিকদের ওপর। তারা বলছেন মিল মালিকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি সাপ্লাই দিচ্ছে না। ফলে বাজারে নতুন করে দেখা দিচ্ছে চিনি সংকট।
এদিকে খুচরা পর্যায়ে প্রকাশ্যে খোলা বা প্যাকেটজাত চিনির দেখা না মিললেও ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর চিনির দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিনি ব্যবহৃত বহুজাত ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যবসায়ীরা বলেন, চিনির দাম বাড়ায় মিষ্টিজাত পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বাজারে পর্যাপ্ত চিনিও পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় নাজেহাল অবস্থা সাধারণ ক্রেতাদের। তারা বলছেন, আগে চিনি ১১০ টাকা কেজিতে কিনলেও, এখন ১৪০- ১৪৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে এক পর্যায়ে খাবারে চিনির ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে আমাদের ।
ভোক্তারা বলছেন, সরকার বলছে দাম কমিয়েছে, বাজারে গিয়ে দেখি ব্যবসায়ীরা উল্টো দাম বাড়িয়েছে। প্রয়োজন থাকায় চিনি কিনতে হচ্ছে। সরকারের উচিত অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া।
নগরীর বিভিন্ন বাজারের একাধিক দোকানি জানান, অর্ডার দেয়ার পর চাহিদা অনুযায়ী চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। খুব সামন্য পাওয়া গেলে সেটার দামও খুব চওড়া। তারা বলছেন, প্রতি কেজি চিনিতে ২-৩ টাকা লাভ করাও কস্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, সরকার চিনির দাম নির্ধারন করে দেওয়ার পরই থেকে বড় বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে চিনির দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। এছাড়াও তারা আরও বলেন, বড় ব্যবসায়ীদের থেকে চিনি কেনার সময় তারা কোনো রসিদও দিচ্ছেন না। আবার সরকারের কাছে দেখাচ্ছে নির্ধারিত দামে বিক্রি করছেন তারা।
নগরীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চিনির বাজারে এমন অস্থিরতার কারণে অনেক ব্যবসায়ী এখন চিনি বিক্রি করছেন না। ঈদের আগে ৫০ কেজি চিনির বস্তা বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ টাকায়। তবে বর্তমানে বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত।