২৩ অক্টোবর ২০২৫

বোয়ালখালীতে সুপেয় পানির সংকট, নলকূপে মিলছে না পানি

দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী »

বাড়ির নলকূপে ঠিক মতো পানি উঠছে না। এক বালতি পানি বের করতে নলকূপ চাপতে চাপতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি- এমনটি বলছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরসভার চরখিদিরপুর গ্রামের গৃহবধূ সিমলা বড়ুয়া। আর এ অবস্থা শুধু গৃহবধু সিমলা বড়ুয়ারই নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোয়ালখালী পৌর এলাকার পূর্ব গোমদণ্ডী, পশ্চিম গোমদণ্ডীসহ উপজেলার শাকপুরা, কধুরখীল, আমুচিয়া, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপের অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দাদের নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। খাবার পানির জন্য এ-বাড়ি ও-বাড়ির টিউবওয়েলে ধর্ণা দিতে হচ্ছে সাধারণ পরিবারগুলোকে। অকেজো হয়ে গেছে শতশত শ্যালো টিউবওয়েল। কয়েকটি এলাকার নলকূপে মিলছে না পানি। এতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।

বোয়ালখালী পৌরসভার পূর্বগোমদণ্ডীর বাসিন্দা শিমুল দে বলেন, ‘টিউবওয়েল চাপলেও পানি উঠছে না গত এক মাস ধরে। দূর দূরান্ত থেকে খাবার পানি এনে খেতে হচ্ছে। পুকুরে গোসলসহ থালাবাসন ধোয়া মোছার কাজ সারছি।’

উপজেলা সদরের স্কুল ছাত্রী আদিফা আকতার বলেন, ‘খাবার পানির জন্য অন্যদের কাছে যেতে হচ্ছে। যাদের ঘরে গভীর নলকূপ রয়েছে তাদের বাড়িতে প্রতিদিন দুই বেলা করে যাচ্ছি পানির জন্য। এনিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়- বিদ্যুৎ বিল উঠছে, এটা সেটা কতো কি। সামর্থ্য নেই বলে নিজে একটা গভীর নলকূপ বসাতে পারিনি।’

পশ্চিম গোমদণ্ডী ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বজল বড়ুয়া ও অপু বড়ুয়া বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময়টাতে পানি নিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ব্যবহারের পানি তো দূরের কথা খাবার পানিরও সংকট দেখা দেয়।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘পানির স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণ নলকূপে পানি উঠতে সমস্যা হয়। তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত, শীত ও বসন্তে বৃষ্টিহীন হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।’

গত ১৫ দিন ধরে দূরদূরান্ত থেকে প্লাস্টিকের বালতি ও বোতলে করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন মধ্যম শাকপুরার আন্না চৌধুরী। তিনি জানান, ঘরে নলকূপ থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে পানি উঠছে না। মিস্ত্রি এনে দেখিয়ে ছিলাম। তারা বলছে সব কিছু ঠিক আছে। পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। এ সমস্যায় শুধু তিনি নন, তাদের আশেপাশের প্রায় ২০টিরও বেশি পরিবারের নলকূপে পানি উঠছে না।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুদর্শী দেওয়ান বলেন, সুপেয় পানির সংকট নিরসনে সরকার গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিচ্ছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে এ প্রকল্প চলমান রয়েছে। পৌর এলাকায়ও নিদের্শনা পেলে গভীর নলকূপ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে দেওয়া নলকূপে পানি উঠছে না বা ইউনিয়ন পর্যায়ে পানির সংকট রয়েছে এই ধরণের অভিযোগ এখনো পাইনি। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। সাধারণত ভূগর্ভের পানিরস্তর ২০-৩০ ফুটের নিচে নেমে গেলে শ্যালো টিউবওয়েলে পানি উঠে না। এবছর বোয়ালখালীতে বৃষ্টিপাত তেমন একটা হয়নি।

পৌর এলাকায় ঘন বসতি উল্লেখ করে সুদর্শী দেওয়ান বলেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে নলকূপ রয়েছে। ফলে ভূগর্ভের পানির স্তরে চাপও বেশি। এতে পানির স্তর দিনদিন নেমে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না।

এদিকে বোয়ালখালীতে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড গরমে আর নিরাপদ পানি পান না করায় ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সীমান্ত ওয়াদ্দাদার। তিনি নিরাপদ বিশুদ্ধ পান করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। সহজ পাচ্য ও সদ্য রান্না করা খাবার খেতে হবে। যথা সম্ভব সরাসরি রোদে বেশিক্ষণ না থাকায় ভালো।

আরও পড়ুন