৭ নভেম্বর ২০২৫

তীব্র গরমে বাড়ছে তালশাঁসের কদর

দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী : তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণায় স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের শাস। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার কিংবা অলি-গলিতে তাল শাঁসের বেশ কদর বেড়েছে। প্রতিনিয়ত গরম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের পিপাসা চাহিদা বেড়েছে। ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডাবের পানির পরিবর্তে কচি তালের শাস খেয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছে। সুস্বাদু তালের শাঁস শরীর-মনকে সতেজ রাখে তাই শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সবাই তাল শাঁস খেতে পছন্দ করে।

শুক্রবার (১২ মে) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শ্রীপুর, আমুচিয়া, করলডেঙ্গা, শাকপুরা এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারে সারি সারি সাজানো কচি তাল যে কারও নজর কাড়ে। সেখানে খুচরা বিক্রেতাদের তাল বিক্রি করতেও দেখা গেছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা চড়া দামে বিক্রি করছেন বলে জানান ক্রেতারা।

পৌরসভার তুলাতল রেলবিট এলাকায় কচি তাল বিক্রি করছেন জালাল উদ্দীন নামের এক বিক্রেতা। তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে তাল সংগ্রহ করতে হয়। এবার পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ছোট বড় প্রতি পিচ তাল ৮ টাকা করে কিনে এনেছি। একটি তাল বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়, আকারে বড় তাল ২০-২৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। যা বেচা বিক্রি হয় তাতে আমাদের সংসার ভালই চলে। যে প্রচন্ড গরম তাতে তাল শাঁস লোকজন ভালোই খাচ্ছেন। প্রতিদিন দেড় হাজার- ২ হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি করি। এতে প্রায় ছয় থেকে সাতশ টাকা লাভ থাকে, যা দিয়ে আমাদের সংসার মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যায়।

রেজাউল করিম নামের এক পথচারী বলেন,প্রতিদিন উপজেলার মোড়ে মোড়ে প্রচুর পরিমাণে তাল শাঁস বিক্রি হচ্ছে। এ গরমে বাজারে এসে গেছে কচি তাল। তালের শাঁস পছন্দ করে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। তাছাড়া পুষ্টিগুণে ভরা মানবদেহের জন্য উপকারী তালের শাঁস গরমে মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাশাপাশি মৌসুমি ফল হিসেবে তালের শাঁস একবার হলেও খেতে হয়। যদিও কালের বিবর্তনে উপজেলার গ্রামাঞ্চলে কমে গেছে তাল গাছের সংখ্যা।

শাকপুরা এলাকায় তাল কিনতে আসা নাছিমন আকতার নামের এক ক্রেতা বলেন, অসহ্য গরমে স্বস্তির একমাত্র ফল হচ্ছে তাল শাঁস। মানুষ ফরমালিন মুক্ত যে ফলটি পায় সেটি হলো তাল শাঁস। তাল শাঁস মধু মাসের ঠাণ্ডা প্রকৃতির একটা ফল। বাচ্চারা বায়না ধরেছে, তাই তাদের জন্য তাল শাঁস কিনে নিচ্ছি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সিমান্ত ওয়াদ্দেদার বলেন,তালের শাসের পুষ্টি গুণ অনেক। তালের শাসে আশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। তালের শাস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। কচি তালের শাস রক্তশূন্যতা দুর করে। মুখের রুচি বাড়ায়। এতে সুগার কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগিরাও খেতে পারে।

বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বাংলাধারাকে বলেন,এই এলাকায় তাল গাছের বাণিজ্যিক কোন বাগান নেই। মানুষ সাধারণত বসত বাড়ী বা রাস্তার পাশে তালগাছ রোপন করে থাকে। তালগাছ লম্বা হওয়ার কারনে বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতি রোধ করে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি তাল গাছ লাগানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ