সায়ীদ আলমগীর : অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। বেলা ২টার দিকে সেন্টমার্টিনে আঘাত হানা শুরু করেছে মোখা। বাতাসের তীব্রতায় উড়ে গেছে ঘরবাড়ির চালা। উপড়ে গেছে গাছগাছালি। এতে গাছ পড়ে নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন বলে প্রচার পেয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন আহত হবার কথা স্বীকার করলেও নিহতে তথ্যটি নিশ্চিত করতে পারেনি। সেন্টমার্টিনের মতো, টেকনাফের বাহারছরা, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ উপকূল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। ভেঙেছে গাছগাছালি। এতে অনেক সড়ক-উপসড়কে চলাচল আটকে যায়।
তবে, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের ঘটনার কোন প্রভাব পড়েনি কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়ায়। কিন্তু সন্ধ্যার জোয়ারকালীন পানি ও বাতাসের গতি বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বলছে, সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মোখার দ্বিতীয় ভাগ দেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ইতিমধ্যে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সেন্টমার্টিন অতিক্রম করেছে। এ সময় সেন্টমার্টিনে আছড় লেগেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে সেন্টমার্টিন হয়ে মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এসময় আঘাত হেনেছে সেন্টমার্টিন। তবে সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড়ের তিব্রতা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখনো কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ট্যাুরিস্ট পুলিশ সেন্টমার্টিন জোনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সহকারী উপ-পরিদর্শক মাহফুজ বলেন, মোখার প্রভাবে প্রচুর বাতাস আর বৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি এখনো বলা যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাতাসের আঘাতে গাছ ভেঙে দুজন নিহত হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে সেন্টমার্টিনে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা।
ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া এবং মহেশখালীতে কোন প্রভাব পড়েনি। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে দমকা হাওয়া।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার তঞ্চ্যঙ্গা বলেন, কুতুবদিয়া উপজেলায় মোখার তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও ক্ষতির খবর আমাদের কাছে নেই। তারপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা নিম্নাঞ্চল পরিদর্শন করে দেখবো।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, এখনও পর্যন্ত কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সাগরে জোয়ার আসলে পানি ও বাতাসের তীব্রতা কিছু বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত দুই লাখের অধিক মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সেন্টমার্টিন নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। সেখানে বেলা ২টা হতে দমকা ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড হয়েছে বলে খবর পাচ্ছি। দুইজন মারা গেছে আমরাও খবর পাচ্ছি। তবে, সুষ্ঠু যোগাযোগ না থাকায় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু দিলদার নামে একজন গাছ পড়ে আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। মানুষকে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানান এডিএম।
তিনি আরো বলেন, আমরা আজকে (রবিবার) রাতও অবজারভেশনে থাকবো। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় হয়েছে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।













