এবারের পবিত্র ঈদুল আযহায় টানা ৫দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা। এ ছুটির মাঝে দুইদিন পড়েছে কোরবানির আগে আর দুইদিন ঈদের পরে। কোরনানির আগে দুই দিনের ছুটি পশুরহাটে ঘোরা ফেরায় গেছে সবার। পরের দুইদিন ছুটির পরও ঘোরাঘুরিতে মশগুল ভ্রমণপ্রেমীরা। তবে, পর্যটক আশানুরূপ না আশায় হোটেল-মোটেলের সিংহভাগ রুম রয়েছে খালি।
কক্সবাজার সৈকতের বেলাভূমি ও পর্যটনস্পট গুলোতে প্রতিদিন দুপুর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটছে। স্থানীয়রা সমুদ্র সৈকত দেখার পরিবর্তে আশপাশের পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, ঈদগাঁওর উপকূলীয় চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল ব্রীজ, নবনির্মিত রেল লাইন, নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি পর্যটন স্পট, রামুর জোয়ারিয়ানালা স্বপ্নতরী পার্ক, হিমছড়ি, পেঁচারদ্বীপ ও ইসলামপুরের খাঁন বীচ এলাকায় বিকেলে ভীড় জমায় দর্শণার্থীরা। আর তাদের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
ঈদগাঁওর মেহেরঘোনার ইউনূস খান ও আশেকা দম্পতি বলেন, সৈকত সময়ে-অসময়ে কমবেশি দেখা হয়। কিন্তু পাহাড় ঘেরা কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটনস্পট সেভাবে দেখা হয়নি। এবারের কোরবানি ঈদের পরদিন স্বপরিবারে সোনাইছড়ি পার্কে গিয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। এখানে আমাদের মতো অসংখ্য পরিবারের লোকজন ভীড় করে।
ঢাকার কলাবাগান থেকে আসা পর্যটক বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত শফিকুল ইসলাম জীবন বলেন, আমার স্ত্রী সরকারি চাকরি করে। আমাদের একসাথে ছুটি কোনোভাবে মিলাতে পারি না। এবার কোরবানির ঈদের ছুটিটা একসাথে পেয়ে স্বপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি।পরিবার পরিজন নিয়ে খুব ভালো সময় কাটালাম এখানে।
বরগুনা থেকে আসা পর্যটক শাহেদ আজিম জানান, ঈদের ছুটিতে পাঁচ বন্ধু মিলে কক্সবাজারে এসেছি। কক্সবাজারের পরিবেশ এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। খুব ভালো সময় পার করছি আমরা।
সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে আসা পর্যটক মাহফুজুর রহমান বলেন, সৈকতের বেলাভূমিতে ভালো সময় পার করেছি। সাগরে ঢেউয়ের তালে মিশে গোসল করার পর সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে যায়।
সৈকত সংলগ্ন ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি কাসেম আলী বলেন, ঈদের ছুটিতে সৈকত তীরে পর্যটক-দর্শণার্থীর উপস্থিতি মোটামুটি ছিল। তবে, মার্কেটে তেমন বেচা বিক্রি ছিল না এবং এখনো নেই। আশা করছি সামনে হয়তো বিক্রি বাড়বে।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছে না। এবার টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকায় হোটেল বুকিং পরিপূর্ণ হবে বলে আশা করছিলাম। কিন্তু সেই আগের নিয়মেই অতিথি ছিল আমাদের।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পর্যটক কিছুটা এসেছে। ৪০-৪৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছে আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কক্সবাজার পর্যটন জোনে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় চার শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে একরাতে প্রায় সোয়া লাখ লোক রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।
কক্সবাজারের সরকারি চাকুরে সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, কোরবানির ঈদের ছুটিতে সরকারি দপ্তরের পদস্থল কর্মকর্তাগণও স্বপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। স্ব স্ব বিভাগের রেষ্ট হাউজেই তাদের অবস্থান ছিল। তারাও সৈকত, ইনানী, হিমছড়ি, পাটোয়ারটেক, রামুর বৌদ্ধবিহার, সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছেন।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজওনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া ছিল আগে থেকেই। সমস্ত পর্যটন স্পটগুলোতে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের যেকোন ধরণের হয়রানি থেকে মুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তিনটি টিম সমুদ্র সৈকত ও আশপাশের এলাকায় নিয়ম মতো কাজ করছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটক-দর্শণার্থীসহ জেলার অধিবাসীদের নিরাপত্তায় সতর্ক নজর রাখছে টহল পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। কোন অঘটন ছাড়াই কোরবানি ঈদের ছুটি পার হয়েছে। এখনো সবখানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।













