৫ নভেম্বর ২০২৫

ওসির বিরুদ্ধে মামলা করা মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে এবার স্ত্রীর মামলা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন সময়ের পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করে আলোচনায় এসেছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ মুনতাকিম প্রকাশ মোস্তাকিম। এবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ।

এ ঘটনায় গত সোমবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদি হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন অভিযুক্ত মোস্তাকিমের স্ত্রী হাবীবা আক্তার।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১০ অক্টোবর ১৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মোস্তাকিম-হাবীবা। কিন্তু বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো স্বামী মোস্তাকিম। চলতি বছরের ৬ জুন জোরপূর্বক ৫ লাখ টাকা এনে দেওয়ার দাবিতে হাবীবাকে বাবার বাড়িতে পাঠায় অভিযুক্ত মোস্তাকিম। এরপর ওইদিন বিকেলে স্ত্রী হাবীবা আক্তারের বাড়িতে এসে আবারো টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে সে। কিন্তু তার স্ত্রী হাবীবা আক্তার টাকা দিকে অস্বীকৃতি জানালে তাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মেরে জখম করে মোস্তাকিম।এসময় টাকা না দিলে হাবিবাকে তার সংসারে ফিরিয়ে না নেওয়ারও হুমকি দেয় সে।

বর্তমানে নিজের বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন স্ত্রী হাবীবা আক্তার। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমংসার কথা বলা হলেও তা না হওয়ায় মামলা দায়ের করতে বাধ্য হন অভিযুক্তের স্ত্রী হাবীবা আক্তার।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী এম জাফর আলম বলেন, সোমবার চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২-এ ফৌজদারি বিধি আইনের ২০০ ধারায় মামলার বাদিনী হাবীবা আক্তারের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এরপর শুনানি শেষে আদালত মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার আদেশ প্রদান করেন।

কে এই মোস্তাকিম?

চলতি বছরের ১০ জানুয়ারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতলের মূল ফটকের সামনে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কিডনি আক্রান্ত রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজনরা। সে কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ মুনতাকিম যাকে মুস্তাকিম নামে ডাকা হয়। সেসময় রাস্তায় যানজট সৃষ্টির হওয়ার কারণে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ফুটেজে দেখা যায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন আন্দোলনকারীদের দৃশ্য নিজের মোবাইল ধারণ করছিলেন। কিন্তু তাতে বাঁধা প্রদান করে মোবাইল কেড়ে নিতে গিয়ে ওসি নাজিম উদ্দিনকে মাটিতে ফেলে দেয় মোস্তাকিম নামে ওই যুবক। এরপর পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তির ঘটনায় তাকে আটক করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। একই দিন সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করার দায়ে পাঁচলাইশ থানায় তার বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ১৪৩,৩৩২ এবং ৩৫৩ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। পাচঁলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারের উল্লেখ করা হয়, মোস্তাকিমসহ অজ্ঞাত আরো ৫০ থেকে ৬০ জন আসামী বেআইনীভাবে দায়িত্বরত পুলিশের উপর চড়াও হয়।এসময় দায়িত্বরত পুলিশসদস্যদের উপর কিলঘুষি মেরে আহত করা হয়। যেখানে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিনসহ আরো কয়েকজন পুলিশের কর্মকর্তা আহত হন।

ওই ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের ইউনিফর্মের কলার ধরে টানা হেঁচড়া করেন মোস্তাকিম। এরপর কলার ছেঁড়া অবস্থায় মিডিয়ার সামনে কথা বলতে দেখা যায় ওসি নাজিম উদ্দিনকে। পরে বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। বিভিন্ন মিডিয়ার শিরোনাম হন মোস্তাকিম। তাকে নিয়ে বাড়তে থাকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। পরবর্তীতে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে সামাজিক যোগযোগসহ বিভিন্ন ভিডিও বক্তব্যে নিজের দোষ স্বীকার করে বক্তব্য দেন মোস্তাকিম।

কিন্তু ঘটনার একমাস পর চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে নিযার্তন এবং হেফাজত মৃত্যু আইনে বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন মোস্তাকিম। যেখানে অভিযুক্তের তালিকায় ছিলো আরো কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নামও।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলাটি তদন্ত করা হয় সিআইডিতে। গত ১০ মে সিআইডির দেওয়া প্রতিবেদনে মামলার অভিযোগের বিষয়টি তথ্যগত ভাবে ভুল প্রতীয়মান হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ