২৬ অক্টোবর ২০২৫

ওষুধ নিয়ে বাকবিতণ্ডা— ‘হেলথ কেয়ার’র এমপিও’র হাতে এসআর খুন

এক ফার্মেসির জন্য অর্ডার করা ওষুধ অন্য ফার্মেসিতে বিক্রয় নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে ধারালো অস্ত্রে গলা কেটে ওষুধ সরবরাহকারিকে (এসআর) জবাই করে হত্যা করেছে একই কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশন অফিসার (এমপিও)। হত্যা শেষে হাসপাতালের দেয়াল টপকে বাসায় গিয়ে রক্তাক্ত শার্ট-প্যান্ট পাল্টে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রাখা মোটরসাইকেল নিতে এলে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঘটনাস্থল হতে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও নিহতের ব্যাগ এবং নগদ টাকা উদ্ধার হয়।

শনিবার (১৫ জুলাই) দিনগত রাত সোয়া ১০টার দিকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

আটকের পর আশিক থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার বিবরণ দিয়েছেন বলে, রোববার বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী।

নিহত এরশাদ আলী (৩২) কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার সুতাইল এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ওষুধ সরবরাহকারী (এসআর) হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকারী আশিক বিল্লাহ সুমন (৩৫) ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর ছনধরা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তিনিও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশন অফিসার (এমপিও) চকরিয়ায় দায়িত্ব পালন করতেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম জানান, শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে জনৈক ব্যক্তি চকরিয়া থানার ডিউটি অফিসারকে মুঠোফোনে বলেন, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতর মসজিদের দক্ষিণ পাশে এক ব্যক্তির জবাই করা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়েই চকরিয়া থানা পুলিশের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ট্রাফিক) নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা, পিবিআই ও সিআইডি, এবং র‍্যাব-১৫ এর আলাদা টিম ঘটনাস্থলে পৌছে ক্রাইমসিন ম্যানেজম্যান্টসহ আলামত সংগ্রহ করেন। পরে ঘটনায় জড়িতকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়।

তিনি আরও বলেন, অভিযানকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটনাস্থলের পাশ হতেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আশিক বিল্লাহ সুমনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমন স্বীকার করেছেন তিনিই তার সহকর্মীকে খুন করেছেন।

সুমন জানায়, কোম্পানির ওষুধ বিক্রয়কে কেন্দ্র করে উভয়ের মাঝে আগে হতে বিরোধ ছিল। গত ১৫ জুলাই সুমন চকরিয়ার আল রাজি হসপিটাল ফার্মেসির নামে ১৯ হাজার ২৩০ টাকার একটি ভাউচার করে আনা ওষুধ বদরখালীর আল-আমিন ফার্মেসি ও নূর আহাম্মেদিয়া ফার্মেসিতে বিক্রয় করেন সুমন। বিষয়টি এসআর (ভিকটিম) এরশাদ আলী জানতে পেরে কোম্পানীর ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিত করবে বলায় সুমন তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেন। পরিকল্পনা মতো চকরিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের দোকান থেকে একটি নতুন ছোরা কিনে কৌশলে এরশাদকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতর মসজিদের দক্ষিণ পাশে নিয়া যান। সেখানে তার বিষয়টি কোম্পানীর উর্ধ্বতনদের না জানাতে বললে উভয়ের মাঝে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সুমন তার প্যান্টের পকেটে থাকা ছুরি বের করে এরশাদের গলায় পোচ মেরে গুরুতর জখম করে। ভিকটিম এরশাদ দৌড়ে ১৫ ফুট অদূরে ঘাসের উপর পড়ে যায়। তখন সুমন হাটু দিয়ে আঘাত করে এরশাদকে মাটিতে শুইয়ে পুনরায় ছুরি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ভিকটিমের কাঁধের ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দেয়াল ডিঙ্গিয়ে পালিয়ে যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনাস্থলের আনুমানিক ৫শ মিটার দূরে সুমনের ভাড়া বাসায় গিয়ে রক্তাক্ত জামা কাপড় পরিবর্তন করে ঘটনাস্থলে রেখে যাওয়া মোটরসাইকেল নেয়ার জন্য আসলে পুলিশের আভিযানিক টিম তাকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করে। এসময় তার জবানবন্দির ভিত্তিতে ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের আশপাশ হতে ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি, ভিকটিমের ব্যবহৃত অফিস ব্যাগ ও নগদ টাকা উদ্ধার করেন।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ জানান, আটক আশিক বিল্লালকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিচারক তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন