নাম মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। বাবা-মা ভালোবেসে হাদি বলেই ডাকেন। বয়স মাত্র ১১ বছর। যেখানে একজন ১১ বছরের বাচ্চার সারাদিন ছুটোছুটি করে বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা সে জায়গায় আমানুল্লাহ হাদির গল্পটা অনেকটাই ভিন্ন।
জন্মের পর থেকেই অটিজমে আক্রান্ত আমানুল্লাহ হাদি। পারে না নিজের পায়ে দাঁড়াতে। চিৎকার করে মা বলে ডাকবে সেই শক্তিটাও যেন সৃষ্টিকর্তা কেড়ে নিয়েছেন তার কাছ থেকে। মোহাম্মদ আল আমিন ও রহিমা আক্তার দম্পতির তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে আমানুল্লাহ সবার বড়ো।
১২ বছর আগে মোহাম্মদ আল আমিন বিয়ে করেছিলেন রহিমা আক্তারকে। রহিমা নদী ভাঙ্গনে সর্বহারা পরিবারের মেয়ে। স্বামী স্ত্রী দুজনেরই যেন একই দশা। নেই মাথা গুজার মতো নিজের কোনো ঘর বা থাকার জায়গা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পেছনে ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে গাদাগাদি করে ভাড়ায় থাকেন আল আমিন ও রহিমা দম্পতি।
পেশায় দিনমজুর আমানুল্লাহর পিতা মোহাম্মদ আল আমিন বাংলাধারাকে বলেন, আমি গরিব মানুষ। দিনে এনে দিনে খাই। যে দিন কাজ পাই না সেদিন ঘরে রান্না হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় থাকি।
তিনি আরও বলেন, ছেলেটা অসুস্থ। ছেলেটার জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। ডাক্তার ও ঔষধপত্রের খরচ মিলিয়ে মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। তবে টাকার অভাবে এখন আর ছেলের জন্য ঔষধ কিনতে পারি না। কষ্টে আমার বুক ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা। ওর জন্য কিছুই করতে পারলাম নাহ আমি। এই কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আমানুল্লাহর পিতা মোহাম্মদ আল আমিন।
আমানুল্লাহর মা রহিমা আক্তার বলেন, হাদি আমার খুব আদরের সন্তান। আমার সব চিন্তা ওকে ঘিরেই। আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তার চিকিৎসার খরচ জুগাই। আমি চাই সরকার যেন আমার ছেলেটার জন্য কিছু করে। ছেলের কষ্ট আমি সইতে পারি না। ডাক্তার বলেছে ভালো চিকিৎসা হলে আমার ছেলেটা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন পার করতে পারবে।
আমানুল্লার পাশেই ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে থাকেন মোহাম্মদ বেলাল। তিনি পেশায় একজন ফুচকা বিক্রেতা। তিনি বলেন, আমি মাঝে মাঝে দেখি আল আমিনের ঘরে রান্না হয় না। তখন আমার খুব খারাপ লাগে। আমি মাঝে মধ্যেই ওদের ঘরে খাবার পাঠাই।
তিনি আরও বলেন, ওদের ছেলেটা যদি সুস্থ হয়ে যেত তবে তাদের দুঃখ কিছুটা হলেও কমবে। আমারতো সামর্থ নেই, যাদের সামর্থ আছে তাদের উচিত এই পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসা।