বাজারে খাদ্যপণ্যের কোন সংকট নেই। সরবরাহও ভালো। তারপরও চাল, ডাল, চিনি, আটা, আদা, রসুন, এলাচ, শুকনা মরিচ, ভোজ্যতেলসহ প্রায় খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সবজি, ডিম ও মুরগির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম চড়া।
এদিকে নির্ধারিত দরে মিলছে না চিনি ও সয়াবিন। বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৮৯ বিক্রির ঘোষণা দিলেও তা এখন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম ১২০ টাকা বেঁধে দেয়া হলেও বিক্রি করছে কেজিপ্রতি ১৩৩ থেকে ১৩৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও চকবাজারে কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়তে চালের যোগান পর্যাপ্ত থাকার পরও এখনও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। মিনিকেট বা নাজিরশাইল চালের মতো চিকন চালের কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। আর ইরি ও স্বর্ণা মানের মোটা বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।
এছাড়া মসুর ডাল কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ৯৫-১০০ টাকার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। বাজারে মুরগি, ডিম সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে কেজিতে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। আর সোনালি বিক্রি হয়েছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫২০ থেকে ৫৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে। আর লেয়ার মুরগির ডিম ডজন ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা ক্রেতা আশরাফুল আলম নামের এক কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম তো প্রতিদিনই বাড়ছে। এটি নতুন করে কি আর বলবো। বাজারে গিয়ে চাহিদার অর্ধেক পণ্য কিনতেই টাকা শেষ। মাস শেষে যে বেতন পায় তা দিয়ে পরিবার চালানো দায় হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে, এসব দেখার কেউ নেই।’
মুরগির পাইকার ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুরগির বাচ্চা কেনাতে দাম বেশি পড়ে, অন্যান্য খরচসহ এক কেজি ওজনের মুরগি তুলতে খরচ হয় ১৪০-৪৫ টাকা। অনেক ফার্ম মালিক বর্তমান মুরগি উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। যেসব মালিক উৎপাদন করছে, তারা কমদামে মুরগি বিক্রি করতে চায় না।’
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. আলী হোসেন বলেন, ‘আশুরার জন্য র্ফাম মালিকরা সিন্ডিকেট করে মুরগির দাম বাড়াচ্ছে। ১৫২ টাকার মুরগি এখন ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে।’
এদিকে ভোক্তাদের সবচেয়ে ভোগাচ্ছে ভোজ্যতেল। দফায় দফায় দাম বাড়ানোর পর গত ১১ জুন রোববার থেকে লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানোর কথা থাকলেও বাজারে কোথাও তার কোন প্রভাব পড়েনি। বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৮৯ বিক্রির ঘোষণা দিলেও তা এখনো ২০০ টাকায় বিক্রি করছে। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম এখনো ৮৫০ থেকে ৮৭০ টাকা। এছাড়া ১৬৭ টাকার খোলা সয়াবিন বিক্রি করছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা।
এদিকে সরকার খুচরা বাজারে চিনির দাম বেঁধে দিয়েছিল ১২০ টাকা। অথচ বাজারে এ দামে কোথাও নেই চিনি। যা এখনো বিক্রি করছে কেজিপ্রতি ১৩৩ থেকে ১৩৫ টাকায়।
এদিকে সামুদ্রিক মাছের যোগান ভালো থাকাতে মাছের দাম আরো কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘মধ্যসমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলারগুলো আসতে আরো দুয়েকদিন সময় লাগবে। এত মাছের দাম কিছুটা কমবে বলে তারা আশা করেন।’
গতকাল বাজারে সমুদ্রের লইট্যা বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। আর পোয়া ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, কোরাল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, রুপচান্দা ৩৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, মাইট্যা ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া ইলিশের দাম কিছুটা কমতির দিকে। সাইজভেদে ইলিশ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা থেকে হাজারের বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে চিনি কিনতে আসা স্বপন বাবু নামের এক হোটেল ম্যানেজার বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া দামকে ব্যবসায়ীরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেশি দরে বিক্রি করছে। বাজার মনিটরিং নেই বললেই চলে। প্রশাসন যতদিন শক্ত অবস্থানে যাবে না ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকবে না।’
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম কিছুটা কমতির দিকে হলেও চড়া রসুনের বাজার। বাজারে ভারতীয় আমদানি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা আর ইন্দোনেশিয়ার আদা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমদানির রসুনের বাজার বেশ চড়া। বাজারে রসুন বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। এছাড়া আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
এদিকে বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির যোগান ভালো থাকার পরও দামে তেমন স্বস্তি নেই। সবচেয়ে দাম বেড়ে ডাবল সেঞ্চুরিতে টমেটো। আর গত একমাস ধরে অস্থিরতা সৃষ্টি করা কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমতির দিকে। বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। এদিকে বেগুনের ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে। সূত্র : সুপ্রভাত













