৫ নভেম্বর ২০২৫

শরতের প্রাণ ফিরেছে পাহাড়ের প্রকৃতি-ঝিরি-ঝর্ণায়

পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘযুগ ধরে বসবাস করে আসছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা। জুম ধানের উপর নির্ভরশীল সেসব জনগোষ্ঠিদের প্রধান সমস্যা পানি সংকট। গ্রীষ্মকালে প্রবল পানি সংকটে ভূগতে হয় তাদের। এবছরও নদী-নালা, ঝিরি-ঝর্ণা ও শাখা প্রশাখা নদীর ঝিরিগুলো শুকিয়ে চৌচির। দেখা নেই বিশুদ্ধ পানির। এতে পানিশূন্য চরম হাহাকারে থাকতে হয়  পাহাড়ে বসবাসরত মানুষদের।

কিন্তু শরতে পাল্টে গেছে পাহাড়ের প্রকৃতির চিত্র।  ঝিরি-ঝর্ণায় পানি ঝরছে অবিরাম। সহজেই বিশুদ্ধ পানি পাওয়ায় দুর্গম জনপদের মানুষদের মনে ফিরেছে স্বস্তি।

দুর্গম পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা জানিয়েছেন, বান্দরবানে বছরের অন্তত চারমাস পানি সংকটে পড়তে হয়। সেই চারমাস তীব্র গরমে ঝিরিতে পানি শুকিয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানি খুঁজতে মাইলের পর মাইল হাটঁতে হয়। তবুও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু এখন বর্ষাকালে এসে বিশুদ্ধ পানি পাওয়াতেই খুশি সেসব দুর্গম জনপদের মানুষ। যেসব ঝিরি মরা ছিল সেসব ঝিরিতে ঝরছে  পানি । এখন এসব পানি সংরক্ষণ করার সময়। এই পানি সংরক্ষণ করা গেলে বছরের অনান্য সময়েও সংকট কাটানো সম্ভব। তাছাড়া নিজেদের মধ্যে সচেতনতা আনা জরুরী বলে মনে করছেন দুর্গম পাহাড়ের জনগোষ্ঠিরা।

জানা গেছে, পাহাড়ি অঞ্চলে ঝিরি ও নদীর পানি সঞ্চয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাহাড়ি বন ও পাথর। প্রাকৃতিকভাবে তৈরিকৃত এই পাথরগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে পানি সংরক্ষণ ও সঞ্চয় করে থাকে। আর এই সঞ্চয়কৃত পানি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে পানি সঞ্চয়ের এ প্রাকৃতিক মাধ্যমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ নদী ও ঝিরিগুলো মারা যাচ্ছে। বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলার গভীর জঙ্গলের ঝিরি থেকে প্রতিদিন পাথর তোলা হচ্ছে। এর ফলে ইতিমধ্যে কয়েকশ ঝিরি মারা গিয়েছে। কিন্তু শরৎতে এসে সেসব ঝিড়ি এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বান্দরবানের প্রত্যান্তঞ্চলের বেশীর ভাগই বসবাস করেন ম্রো, বম, ত্রিপুরা, খুমী, চাকমা, তচঙ্গ্যা । বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত এই চার মাস পানি সংকটে থাকতে হয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদের। সেদিনে তীব্র গরমে পানির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে পানির জন্য হাহাকারে পড়তে হয়। পানি পেলেও সেটি আবার বিশুদ্ধ নয়। কিন্তু এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে প্রত্যেক ঝিরিতে। এই পানি সংরক্ষণ করা গেলে বছরে ওই চারমাস পানি সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব । তাছাড়া প্রত্যেক গ্রামে পানি উৎসের স্থানে জুম চাষ ও সেগুন গাছ লাগানো যাবে নাহ। বরং পানির উৎস আরো বাড়াতে হলে ঝিরির পাশে কলা গাছ লাগানো প্রয়োজন। আর নিজেদের মধ্যে প্রয়োজন সচেতনতা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান –রুমা- থানচি ও চিম্বুক সড়ক জুড়ে পাহাড় থেকে নেমে আসছে অবিরাম পানি। তৈতুং শব্দের স্বচ্ছ পানি ঝড়ছে কয়েকশত ছোট-বড় ঝিরিতে। দুর্গম জনপদের জনগোষ্ঠিরাও পানি পেয়ে খুবই খুশী।

বান্দরবান মানবধিকার সমাজকর্মী অংচমং মারমা জানান, বান্দরবানে মার্চ- জুন এই চারমাস পানি অভাব দেখা দেয়। কিন্তু এই বর্ষায় সব স্থানে পানি পড়ছে। দুর্গম এলাকায় জনগোষ্ঠিদের এখন পানি সংরক্ষণ করার সময় । তাছাড়া সরকার কিংবা প্রশাসন এই পানি ধরে রাখতে কোন টেকনোলজি অর্থাৎ ঝিরিতে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পাইপে মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখা গেলে দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠিদের পানি সংকট কমে আসবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবানের চ্যাপ্টার সভাপতি জুয়ামলিয়ান আমলাই বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম এলাকায় প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেয়। সেসব মৌসুমে যদি সারাবছর পানি পাওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে দুর্গম এলাকায় পানি পাওয়া যাবে। আর পানি পেতে হলে সাধারণ মানুষের মাঝে আনতে হবে সচেতনতা। তাছাড়া প্রতিটি বাড়িতে যদি ওয়াটার রিজারভার তৈরী করা যায় নিজের কিংবা সরকারের উদ্যেগে তাহলে শুকনা মৌসুমে পানি পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ