হকার, দোকানদার, সিএনজি-টমটম ও মাইক্রোবাসের দখলে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক ও অলি-গলির ফুটপাথ। অনেকেই ফুটপাত ছাড়িয়ে দখল করে থাকেন চলাচলের রাস্তাও। এসব অবৈধ দখলের কারণে কক্সবাজার শহর পরিণত হয়েছে দু:সহ যানজটের নগরীতে। জনগণের দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ লাঘবে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর হতে কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে শুরু হয়েছে প্রত্যাশিত অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, দু’দিন ধরে কক্সবাজার শহরে মাইকিং করে সকল প্রকার অবৈধ দখলদারদের স্বেচ্ছায় দখল ছেড়ে দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে বৃহস্পতিবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।
সেই ঘোষণা মতেই জনদুর্ভোগ লাঘবে শহরের জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পৌর ভবনের সামনের সড়কে বসা অবৈধ দোকান ও স্টপেজ সরানোর মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বেলা ১২টা হতে অভিযান শুরু হয়।
ভুক্তভোগীদের মতে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রতিষ্ঠান। এর আশপাশে গড়ে উঠেছে আরো একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। সদর ও অন্যান্য হাসপাতালে মূমুর্ষূ রোগীসহ প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু এই সড়কটির উভয় পাশের ফুটপাত দখল করে দোকান, গাড়ি পাকিং, এ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রাখার কারণে সাধারণ মানুষও চলাচল করতে পারে না। আর রোগীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ।
দেখা যায়, শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ সড়ক হকার আর এ্যাম্বুলেন্সের দখলে। ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্পের আশের-পাশের রাস্তা সিএনজির দখলে। এখানে রাস্তার উপর স্ট্যান্ড বানিয়েছে সিএনজিগুলো। এছাড়া শহরের মুক্তিযোদ্ধা সরণীর পুরোই যেন গাড়ি পার্কিং স্টেশন। প্রধান সড়কের উভয় পাশের ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকান ও অবৈধ স্টেশন। বিভিন্ন দোকানদারও তাদের দোকানের সামনের সড়ক দখল করে পন্য রাখছে লোভী ব্যবসায়ীরা। যে কারণে তীব্র যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ।
শহরের ফুলবাগ সড়ক এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, শহরের বড় বাজার এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। যেখানে ফুটপাত কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে কিছুই নেই। সব দখল করে দোকানের মালামাল প্রদর্শনী রাখা হয়। রয়েছে অবৈধ স্টেশনও।
শহরের ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা ও তারাবনিয়ার ছরার আরিফ উল্লাহ রিয়াদ বলেন, এভাবে চলতে পারেনা। পৌরসভা এলাকায় চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু নেই। পৌরসভার সড়ক, উপ-সড়কে বের হলেই দূর্ভোগ আর দুর্ভোগ। অবৈধ স্টেশন, ইজিবাইকে জানজটে পড়ে নষ্ট হয় কর্মঘন্টা। এসব দুর্ভোগ কমাতে হবে। বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ শুরু হবে শুনে আশায় বুক বেঁধেছি আমরা। ধারাবাহিকভাবে পৌরসভার সকল নালা-নর্দমা, জমিও দখল মুক্ত করার ঘোষণা শুনেছি। এ ঘোষণা যেন লোক দেখানো না হয়, আমরা জনদুর্ভোগ লাঘব চায়। প্রয়োজনে পৌরসভার সচেতন জনতার সহযোগিতা নিক।
মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার শহরে কোন অবৈধ দখলদার থাকবে না। নির্ধারিত ইজারাদার ছাড়া কেউ পৌরসভার নামে টোল নিতে পারবে না। নালা দখলদারদের বিরুদ্ধেও কঠোর অভিযান চালানো হবে। এটি তার মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত ৩৭ দফার নির্বাচনী ইশতেহার বা জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদার একটি অংশ।
এক প্রশ্নের উত্তরে পৌর মেয়র বলেন, পৌরসভা নির্ধারিত ইজারার বাইরে কোন প্রকার টোল বা চাঁদা নেন না। যারা পৌরসভার কথা বলে এসব অবৈধ দখল বা স্টেশন থেকে চাঁদা আদায় করেন তারা চাঁদাবাজ। তাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই সঙ্গে যানজট নিরসরে অবৈধ ইজিবাইক, অটোরিক্সা, রিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সার বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।
মেয়র বলেন, আঠারো বছরের নিচে কেউ গাড়ি চালক হতে পারবে না। রোহিঙ্গাদের গাড়ি চালানোর কোন সুযোগ নেই। একটি আধুনিক পরিকল্পিত শহর করতে যা যা করার প্রয়োজন তা করা হবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলেই কেবল এটি নিশ্চিত করা সম্ভব।
অভিযানে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার সালাম, প্যানেল মেয়র-১ সালাউদ্দিন সেতু, প্যানেল মেয়র-২ ওমর সিদ্দিক লালু, প্যানেল মেয়র-৩ ইয়াছমিন আক্তার, কাউন্সিলর রাজ বিহারী দাশ, এহেসান উল্লাহ ও নাসিমা আক্তার বকুলসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।













