৩১ অক্টোবর ২০২৫

‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত কক্সবাজার

খোলা রয়েছে ৫৭৬ আশ্রয় কেন্দ্র, সৈকতে উৎসুক দর্শকের ভীড়

উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে একই এলাকায় রয়েছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি সন্ধ্যা হতে রাতের মাঝে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে কক্সবাজারেও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এটি উপকূল অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপকূল এবং প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেয়া ১২ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে- উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে একই এলাকায় রয়েছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি সন্ধ্যা হতে রাতের মাঝে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এটি মঙ্গলবার বিকাল ৩টা নাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কিমি, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো দুর্বল হয়ে সন্ধ্যা হতে রাতে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিমি’র মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ কিমি যা, দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূণিঝড় এলাকার নিকটবর্তী সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সভায় ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৫৭৬টি সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেয়া হয়েছে। জেলার নয় উপজেলার জন্য নগদ টাকা, ১৪ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধ করণ ওষুধও সরবরাহও। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে কক্সবাজারের উচু উচু ভবন ( বিশেষ করে হোটেল-মোটেল) আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে গ্রহন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, হামুনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে খোলা হয়েছে ‌’দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’। এডিসি জেনারেলের তত্বাবধানে কমিটিতে এনডিসিকে সমন্বয়ক রাখা হয়েছে। কমিটিতে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ হতে কর্মকর্তাদের নিয়ে ২৪ অক্টোবর বেলা ১২টা হতে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ কার্যক্রম অব্যহত রাখবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরো জানান, দূর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনায় কাজ করছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টীম, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইন-শৃংখলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে। সবখানে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তাগণকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার নয় উপজেলায় ১৪টন চাল, বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুদ রযেছে নগদ টাকা ও শুকনো খাবার।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র প্রভাবে সোমবার রাত হতেই কক্সবাজারে সবখানেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রথমে হালকা বৃষ্টি হলেও মঙ্গলবার দুপুর হতে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। বিকেলের পর টেকনাফের সেন্টমার্টিনসহ উপকূলে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয় বলে জানিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা। দূর্যোগপূর্ণ আবহওয়াতেও সাগরপাড়ে ভীড় করে উৎসুক মানুষ। মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টিস্নাত সৈকত এলাকার ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন অনেকে। পরিবার পরিজন নিয়ে সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় সমুদ্র উপভোগ করছে পর্যটকরাও। তবে, সম্ভাব্য দূর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহ দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছিল বার বার।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হলে আমরা দ্বীপে সকল জায়গায় মাইকিং করে সকলকে সর্তক করেছি। দ্বীপে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস বইছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আসায় সাগরে ঢেউ আগের তুলনায় বাড়ছে। দ্বীপের জেটিঘাটের পাশে থাকা একটি ঝাউগাছ বাতাসে ভেঙে পড়ছে। অন্য এলাকাতেও কিছু গাছপালা পড়ে যাওয়ার খবর শুনছি।

এদিকে, সোমবার ৩ নম্বর সর্তক সংকেত জারির পর সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সকল নৌ-যান চলাচল বন্ধের নির্দেশনায় প্রায় ১৪০০ পর্যটক ওইদিন ফেরত যায়। তবে শতাধিক পর্যটক দ্বীপে থেকে যান।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল ও বড় ঢেউ হচ্ছে। এ অবস্থায় সাগরে গোসল করা নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের সাগরে গোসল করতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের উপকূলে থাকা সাইক্লোন শেল্টারে সোয়া ৫ লাখ লোক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। যেকোন দূর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান হতে সবাই এগিয়ে এলে তা মোকাবিলা সহজ হয়। অতীতের মতো এবারও আমরা সফলকাম হবো ইন শা আল্লাহ।

আরও পড়ুন