২৩ অক্টোবর ২০২৫

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলয় ভাঙতে চান গিয়াস, লড়বেন নৌকার বিপক্ষে

 

চট্টগ্রামের মিরসরাই আসনে (চট্টগ্রাম-১) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের দীর্ঘ দিনের বলয় ভেঙে দিতে চান তার প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। তিনি ওই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে দলের জন্য নিজের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মিরসরাই আসনে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এ উপলক্ষে আয়োজিত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৯৭০ সনে ছাত্রলীগের একজন ক্ষুুদ্র কর্মী থেকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমি আজকের এ জায়গায় এসেছি। ৭৫ পরবর্তী সময়ে দিনরাত দলের জন্য খেটেছি। এরশাদের আমলে ২ বার জেলে গিয়েছি। ৯৬ সালের আন্দোলন করেছি। খালেদা জিয়ার অপারেশন ক্লিন হার্টে গ্রেপ্তার হয়েছি। ওয়ান ইলেভেনের পর ৬ ফেব্রুয়ারি যখন আমার বড় ভাই মারা গেল। যিনি আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন। তার লাশ নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী আমার ঘিরে ফেলে। মুহুর্তেই আমাকে বাড়ি ছাড়া হতে হয়। আমার আপন ভাইয়ের জানাযা পড়তে পারিনি। সেদিন রাতটি ছিল আমার জীবনে এক বিভীষিকাময় কাল রাত। এরপর আমি নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিয়েছি।

আবেগজনিত কণ্ঠে মিরসরাইয়ের প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলো। তখন মিরসরাইয়ে ২৯ টি লাশ পড়ল। এই ২৯ লাশ গুনে গুনে আমি কাঁধে নিয়েছি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাতদিন নেতাকর্মীদের চিকিৎসায় সেবা দিয়েছি। খোঁজ-খবর নিয়েছি। বিএনপির আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের যে ষ্টিমরোলার চালিয়েছিল আমি সবসময় তাদের পাশে ছিলাম।

১৯৯১ সাল থেকে চমেক হাসপাতালে মিরসরাই উপজেলার জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত আছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দুইমাস পাহারায় ছিলাম মহাসড়কে নেতাকর্মীদের নিয়ে। কিন্তুু আমাদের পাশের উপজেলা সেদিন বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। মিরসরাইবাসী আমার, আমি মিরসরাইবাসীর বন্ধু। ইনশাআল্লাহ নির্বাচিত হলে আমি মিরসরাইকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত করব।

মিরসরাইয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন করেছে। মিরসরাই যদি চাঁদাবাজের আতুড়ঘর হয় তাহলে সেখানে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আসবে না। আমি নির্বাচিত হলে মিরসরাইবাসীর চিকিৎসা, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ মৌলিক সকল অধিকার নিয়ে কাজ করব। আগামীকাল আমি মনোনয়ন জমা দিব রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে।

মিরসরাইয়ে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুব রহমান রুহেল। তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের একজন কনিষ্ঠ সদস্য। তাকে এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তার পিতাকে হেভিওয়েট মানলেও ছেলে রুহেলকে হেভিওয়েট মানতে নারাজ গিয়াস উদ্দিন। চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ উপজেলা মিরসরাইয়ে দীর্ঘ দিন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। তার বিপরীতের কেউই গেল ১৫ বছরে সুবিধাজনক স্থানে আসতে পারেনি। এখানে তার বিকল্প চিন্তা করা পাপের মতো ধরা হয়। ওই আসন থেকে এবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। কিন্তুু দল তার আগ্রহকে গুরুত্ব দেয়নি৷ এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলয়ের কাছে অনেকটা অসহায় বিপরীতের এই দুই নেতা। সাম্প্রতিক সময়ে গিয়াস উদ্দিনের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ ওঠেছে মোশাররফ বলয়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের উপরও কয়েক দফায় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এসব ঘটনায় তিনি আদালতে মামলাও করেছেন৷ অবস্থা এমন যে মিরসরাইয়ে তারা দাঁড়াতেই পারছেন না। এ অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার খবরে ওই উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সাবেক মন্ত্রীপুত্র রুহেলের সঙ্গে গিয়াস উদ্দিন পেরে ওঠতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। তবে তাকে সমর্থন জানিয়ে তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন অপর মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।

আরও পড়ুন