২৪ অক্টোবর ২০২৫

ঈদগাঁও-চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল-কক্সবাজার সড়ক

২১ কিলোমিটারে ৬৮ স্পিড ব্রেকার; ভোগান্তিতে চালক-যাত্রী

কক্সবাজারের ‘খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী-ঈদগাঁও’ আঞ্চলিক মহাসড়কের দূরত্ব ২১কিলোমিটার। এ দূরত্বের সড়কটি অতিক্রম করে কক্সবাজার জেলা শহরে ঢুকা বা জেলা শহর হতে ঈদগাঁও পৌঁছাতে গেলে ৬৮টি ছোট-বড়-মাঝারি ‘স্পীড ব্রেকার’ লাফিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে চালক-যাত্রীদের। অপরিকল্পিত স্পীড ব্রেকারে গাড়ির ঝাঁকুনি বাড়লেও কমছে গতি। ফলে সঠিক সময়ে জরুরি কাজে পৌঁছানো হয়ে উঠে না এ সড়কে যাতায়াতকারিদের। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ছেন রোগী ও নারীরা।

সরকারের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নিয়ন্ত্রিত আঞ্চলিক ও মহাসড়কে যাচ্ছেতাই স্পীড ব্রেকার দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রয়োজনে সওজ বিশেষ কায়দায় স্পিড ব্রেকার বসায়। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে নিজেদের বাড়ির সামনে ‘যার মন চেয়েছে’ বাঁধ আকারে স্পীড ব্রেকার বসিয়ে সড়কটি চলাচলের দূর্ভোগে পরিণত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সূত্রমতে, ঈদগাঁও হতে জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে কক্সবাজার শহরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। মহাসড়কে যানচলাচল ও দূরত্ব বেশী হওয়ায় প্রায় অর্ধেক দূরত্ব, সহজ ও নিরাপদ যাতায়াতে উপকূলের ১০-১২টি ইউনিয়নের লাখো চলাচলকারি কক্সবাজার যাতায়াতে ঈদগাঁও-চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল সড়কটি ব্যবহার করে আসছেন। দু’দশক আগে চৌফলদন্ডী ও বাঁকখালীতে ব্রীজ বসানো ও সড়ক পাকা হবার পর প্রয়োজনীয় যোগাযোগসহ সড়কটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে। এরপরই বেড়েছে সড়কে স্পিড ব্রেকারে বসানোর প্রতিযোগিতাও।

কক্সবাজার শহরে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের দোকান করা সড়কেটি নিয়মিত যাতায়াতকারি ঈদগাঁওর ব্যবসায়ী নুরুল আলম বলেন, মহাসড়কের ঈদগাঁও বাস স্টেশন হতে খুরুশকুল মাঝিরঘাট ব্রীজ পর্যন্ত আসতে যেতে প্রতিদিন ৬৮টি ছোট-বড়-মাঝারি স্পীড ব্রেকার পার হতে হয়। সড়কে নরমাল ২৫-৩০ গতিতে চালিয়ে মোটরসাইকেলে ১৫-২০ মিনিটে কক্সবাজার-ঈদগাঁও পৌঁছে যাবার কথা- সেখানে একঘন্টা সময় ব্যয় হয়। তারউপর আনাড়ি ইজিবাইক চালকদের কারণে কোথাও জ্যাম পড়লে সেই সময় দেড় বা দুই ঘন্টায় গড়ায়।

পেশাজীবি নাছির নোমানী বলেন, দূরত্ব কম হওয়ায় শত শত ব্যবসায়ী ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, পিএমখালী, ভারুয়াখালী, খুটাখালী ইউনিয়ন হতে নিত্য আসা-যাওয়ায় চাকরিস্থল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সবাই স্পিড ব্রেকার সমস্যায় অতিষ্ঠ।

যাতায়তে সড়কটিকে ভরসা হিসেবে নেয়া ঈদগাঁওর প্রবাস ফেরত মোহাম্মদ ইউনূস খান বলেন, দূর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়ক এড়িয়ে বৃদ্ধ মা ও পরিবারের সদস্যদের এ সড়কেই জেলা সদরের হাসপাতালে আনা-নেয়া করা হয়। দেখেছি আলমাছিয়া মাদ্রাসা সড়কে দশ গজে দুটি, পালাকাটায় ৩০ গজে চারটি এভাবে ২১ কিলোমিটার দূরত্বে কিলোমিটারে গড়ে ৩টির চেয়ে বেশি স্পিড ব্রেকার বসানো। সড়কের রেলক্রসিং এলাকা, চারা বটতল, খামারপাড়া ও চৌফলদন্ডী বাজার, খুরুশকুলের কয়েক এলাকার বেশ কয়েকটি স্পিড ব্রেকার বাঁধ বলে মনে হয়। সিএনজি পূর্ণ মানুষ থাকলে, বাইকে দুজন উঠলে নিচের অংশ স্পিড ব্রেকারে আটকে যায়। এভাবে ৬৮বার দপাদপ গাড়ির ঝাঁকুনিতে রোগী আরো অসুস্থ এবং রোগীর সঙ্গীরা কোমর ব্যাথায় নড়াচড়া করতে পারেন না।

সরেজমিন দেখা যায়, সবুজ-শ্যামল পরিবেশে এঁকেবেঁকে চলে যওয়া সড়কে কোন রং বা সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়াই বসানো অসংখ্য স্পিড ব্রেকার। স্পিড ব্রেকারগুলোর আগে-পরে নেই কোন প্রতীকি চিহ্ন বা সতর্কবানী। সড়কের কিনারে কেউ নতুন বাড়ি করছে, সেখানে বসিয়ে দেয়া হয় একটি স্পিড ব্রেকার। হাট-বাজার, দোকান এমনকি চা-দোকানের সামনেও বিনা বাঁধায় বসেছে গতিরোধক। যদিও স্পিড ব্রেকার বসানোদের দাবি- অতি গতি নিয়ে চালানো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে দূর্ঘটনা রোধেই এ পদ্ধতি। কিন্তু এসব অপরিকল্পিত স্পীড ব্রেকারে প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এ স্পিড ব্রেকারগুলোর কারণে সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল চালকরাও সমস্যায় পড়েছেন। প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণত দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) নির্দিষ্ট দূরত্বে, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতেই স্থাপন করা হয়। কিন্তু এ সড়কে বসানো স্পিড ব্রেকার এখন ক্ষতি ও বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এসব গতিরোধকের সামনে পেছনে কোন সতর্ক চিহ্ন নেই। ফলে, নতুন কেউ এসড়ক দিয়ে চলাচল করলে এসব স্পিড ব্রেকারে দূর্ঘটনায় পড়েন।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর বলেন, সড়কে যত্রতত্র স্পিড ব্রেকার তৈরী বেআইনি। কিন্তু প্রয়োজনের নিরিখে দূর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার সওজের নিয়মে বসানো যায় এবং সেখানে অবশ্যই সতর্ক চিহ্নও দিতে হয়। যাতে দিনের বেলার পাশাপাশি রাতের আঁধারে দূর থেকে দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ সড়কে এ নিয়ম মানা হয়নি বলেই দুর্ঘটনা লেগে আছে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ)’র নির্বাহি প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন বলেন, ব্যক্তি বিশেষ চাইলেই সড়কে স্পীড ব্রেকার বসাতে পারেন না। ইতোমধ্যে মহেশখালীর গোরকঘাটা সড়কে বসানো স্পিড ব্রেকার তুলে ফেলা হয়েছে। ঈদগাঁও-চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল সড়কে অসংখ্য স্পীড ব্রেকার বসানোর বার বার অভিযোগ পেলেও ফান্ড না থাকায় তা তুলে ফেলার উদ্যোগ নিতে পারিনি। শিগগিরই এলাকা ভিত্তিক বসানো স্পিড ব্রেকার তুলে প্রয়োজনীয় জায়গায় সওজের নিয়মে আমরা বসাবো এবং সতর্ক চিহ্নও দেবো। এরপর কেউ ইচ্ছে মতো স্পিড ব্রেকার বসালে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন