৩১ অক্টোবর ২০২৫

মিরসরাইয়ে খেলা হবে নৌকা-ঈগলের

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্ধন্দ্বীতা করলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেল ও ঈগল প্রতিকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সাথে। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রতিক বরাদ্ধের পরই উভয় প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।

এদিকে প্রতিক বরাদ্ধ পেয়ে গণসংযোগে নেমেছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও উৎসবমুখর পরিবেশে গণসংযোগ কার্যক্রম শুরু করেছেন। মহাব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরাও।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মিরসরাই আসনে ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। যার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ, জাতীয় পাটির মোহাম্মদ এমদাদ হোসাইন চৌধুরী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সুপ্রীম পাটির মোহাম্মদ নুরুল করিম আফছার ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল মন্নান। সাম্যবাদী দলের প্রার্থী সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া শুরু থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন।

এ আসনে একাধিক দলীয় প্রার্থীর ছড়াছড়ি হলেও ভোটারেরা অনেক দল ও একাধিক প্রার্থীকে চেনেন না। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় ভূঁইফোঁড় দলের প্রার্থী বেড়েছে এবারের নির্বাচনে। যেকারণে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্ধন্দ্বীতা হবে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সুপ্রীম পাটির (বিএসপি) প্রার্থী নুরুল করিম আফছার কিছু মানুষের কাছে পরিচিত বিভিন্ন শালিস বৈঠক করার কারণে। তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় রীতিমতো অবাক হয়েছেন স্থানীয়রা।

বড়তাকিয়া বাজারের ব্যবসায়ি জহিরুল ইসলাম বলেন, মাস খানেক আগে দেখি দেয়ালে সাটানো পোষ্টারে আফছারের ছবি। পরে দেখতেছি সে নাকি এমপি প্রার্থী হয়েছে। যে দল থেকে প্রার্থী হয়েছে কোনদিন ওই পার্টির নামও শুনিনি।

বাংলাদেশ সুপ্রীম পাটির (বিএসপি) প্রার্থী নুরুল করিম আফছার বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমাকে চেনে। অনেকের সাথে আমার উঠাবসা রয়েছে। তবে জীবনে প্রথমবার এমপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এটা অনেক বড় বিষয়। সর্বমহলে আমার পরিচিত রয়েছে।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ দীর্ঘদিন এলাকায় রাজনীতি করছেন। কিন্তু তার দলের পরিচিতি এবং মিরসরাইয়ের গ্রামপর্যায়েও দলটির সুসংগঠিত দলীয় কোনো কাঠামো নেই। ২০০৮ সালেও নির্বাচন করেছেন। এবারো প্রার্থী হয়েছেন। তিনি পরিচিত নন মানতে নারাজ। তিনি বলেন, আমি মিরসরাইয়র আনাচে-কানাচে ঘুরেছি। অনেকে আমাকে চেনে।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ নামের দলটির পরিচিতি ছিল স্বাধীনতার আগে-পরে। কিন্তু দলটি এখন প্রায় বিলুপ্ত। এই দল থেকে মিরসরাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ঢাকার পুরানা পল্টন তোপখানা রোড এলাকার বাসিন্দা শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী। এলাকায় তার ওই অর্থে পরিচিতি নেই। একসময়ের পরিচিত মুসলিম লীগ প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে শুধু এ আসনেই।

উপজেলার দক্ষিণ মঘাদিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহাজান বলেন, ‘মুসলিম লীগ এবং বিএনএফের কার্যক্রম মিরসরাইয়ে নেই। কোনো কর্মসূচিও কোনদিন চোখে পড়েনি। যে দুজন প্রার্থী হয়েছেন তাদের চিনি না। তবে জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কাটাছরায় বলে শুনেছি।’

জাতীয় পাটির প্রার্থী এমদাদ হোসাইন চৌধুরীকেও কেউ চেনেনা। নির্বাচন উপলক্ষে তাকে মিরসরাইয়ে প্রথমবার দেখা যাচ্ছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিনের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, ‘মিরসরাইয়ের ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার মানুষ পরিবর্তন চায়। তাঁরা একটি পরিবারের মধ্যে আর আবদ্ধ থাকতে চায় না। জনগন ৭ জানুয়ারির অপেক্ষায় মুখিয়ে রয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনকে বিজয়ী করার জন্য। ৭ তারিখ সারাদিন জনগণ ঈগল প্রতিকে ভোট দিবে। আশা করছি জনগনের ভোটাধিকার নিয়ে গিয়াস ভাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে।’

মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ‘প্রিয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘ ৫৪ বছর মিরসরাইয়ের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এবার তিনি স্ব ইচ্ছায় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনার সুযোগ্য সন্তান মাহবুব উর রহমান রুহেলকে নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মিরসরাইয়ের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এখানকার জনগণ রুহেল ভাইকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবে।’

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার মোট জনসংখ্যা চার লাখ ৭১ হাজার ৭৫২ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৫ জন। পুরুষ ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪১। মহিলা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গ ২। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৬টি।

আরও পড়ুন